আল-কুরআন সংরক্ষণের ইতিহাসঃ

আল-কুরআন সর্বশেষ্ট ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব। কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মানুষের সার্বিক জীবনবিধান ও দিকনির্দেশনা এতে বিদ্যমান। সুতারাং এর সংরক্ষণ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ স্বয়ং এর ভার গ্রহন করেছেন। 
***

তিনি ঘোষনা করেনঃ- আমিই কুরআন অবর্তীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।(সূরা আল-হিজর,আঃ ৯) 
তিনি তাঁর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে এ কিতাব সংরক্ষণ করেন এজন্যই আজ পর্যন্ত এ কিতাবের একটি হরফ (অক্ষর) হরকত বা নুকতার ও পরিবর্তন হয়নি। এটি যেভাবে নাজিল হয়েছিল আজও ঠিক সেভাবেই বিদ্যমান। আর কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে। 
*** 
আল-কুরআন আরব দেশে মহানবি(স.)-এর উপর নাজিল হয়। এ সময় মহানবি (স.) সাথে সাথে নাজিলকৃত আয়াত মুখস্থ করে নিতেন। আল-কুরআন মুখস্থ করনে রাসুল (স.)-এর দ্রুতপাঠ ও ব্যকুলতা দেখে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সান্ত্বনা দেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ব্যকুলতা দূরীভুত হয় এবং তিনি সহজেই কুরআনের আয়াতগুলো মুখস্ত করে সংরক্ষন করতে লাগলেন। 
*** 
এছাড়া সে সময় লিখিতভাবেও আল-কুরআন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যে কোন অংশ বা আয়াত নাজিল হলে সাথে সাথে লিখে রাখা হতো। পশুর চামড়া,হাঁড়,পাথর গাছের ছাল,পাতা ইত্যাদি ছিলো তখনকার লেখনীর উপকরণ। সাহাবিগণ এগুলোতেই আল-কুরআনের আয়াত গুলো লিখে তা সংরক্ষন করতেন। যেসব সাহাবি লেখাপড়া জানতেন তাঁরা সকলেই কুরআন লিখার মর্যাদা লাভ করেছিলো। তাঁরা ছিলেন সংখ্যাই মোট ৪২ জন। এঁদের মধ্যে প্রধান কয়েক জন ছিলেনঃ-
'''''' ''''' '''''' ''''' ''''' ''''' '''''
★হযরত যায়দ ইবনে সাবিত(রা.) 
★হযরত আবু বকর সিদ্দিক(রা.) 
★হযরত উমর ফারুক(রা.) 
★হযরত উছমান(রা.) 
★হযরত আলি(রা.) 
★হযরত মুআবিয়া(রা.) 
★হযরত উবাই ইবনে কা'ব(রা.) 
★হযরত মুগিরা ইবনে শু'বা(রা.) 
★হযরত আমর ইবনে আস(রা.) 
★হযরত যুবায়র ইবনে আওয়াম(রা.) 
★হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম(রা.) 
★হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা(রা.) 
এদের কেউ না কেউ রাসুলুল্লাহ(স.)-এর সঙ্গে থাকতো। 
*** 
মহানবি (স.)-এর সময় কিন্তু আল- কুরআন একত্রে গ্রন্থবদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু তাঁর তত্বাবধানে লিপিবদ্ধ টুকরোগুলো নানা জনের নিকট সংরক্ষিত ছিলো। 
*** 
হযরত আবু বকর(রা.) প্রথম খলিফা থাকাকালীন সময়ে নবুয়তের কতিপয় মিথ্যা দাবিদার বা ভন্ড নবি ও যাকাত অস্বীকারকারীর আবির্ভাব ঘটে। তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। এইরুপ একটি যুদ্ধ ছিলো ইয়ামামার যুদ্ধ। এটি মুসায়লিমা কাযযাব নামক ভন্ড নবির বিরুদ্ধে, এ যুদ্ধে বহুসংখ্যক কুরআনের হাফিজ সাহাবি শাহাদত বরণ করোন। এতে হযরত উমর (রা.) উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি ভাবলেন যে, এভাবে হাফিয সাহাবিগণ শাহাদত বরন করতে থাকলে এক সময় কুরআন মুখস্তকারী লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে কুরআন বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দেবে। সুতারাং তিনি হযরত আবু (রা.)-কে কুরআন সংকলন করে গ্রন্থকারে লিপিবদ্ধ করার পরামর্শ দান করেন। এ কথা শুনে হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, হে উমর ! রাসুলুল্লাহ (স.) যে কাজ করে যাননি তা আপনি কিভাবে করতে চাচ্ছেন ? 
*** 
হযরত উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! এতে কল্যান রয়েছে। এভাবে হযরত উমর (রা.)-এর বরাবর বারবার অনুরোধ করায় হযরত আবু বকর (রা.) কুরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি প্রধান অহি লেখক সাহাবি হযরত সাবিত (রা.)-কে এ গুরুদায়িত্ব অর্পন করেন। হযরত যায়দ (রা.) কুরআন সংকলনের ক্ষেত্রে বিশেষভাব চারটি পন্থা অবলম্বন করেনঃ-
★হাফিয সাহাবিদের তিলয়াতের মাধ্যমে প্রতিটি 
আয়াতের বিশুদ্ধতা যাচাই করণ। 
★হযরত উমর (রা.)-এর হিফজের সাথে মিলিয়ে 
আয়াতের বিশুদ্ধতা যাচাইকরণ। 
★রাসুলুল্লাহ (স.)-এর উপস্থিতিতে লিখিত হওয়ার
ব্যাপারে ন্যূনতম দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন। 
★চূড়ান্তভাবে লিখিত আয়াতগুলো অন্যান্য সাহাবির
সংরক্ষিত পান্ডলিপির সাথে তুলনা ও যাচাইকরণ। 
***
এভাবে চরম সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে হযরত যায়দ ইবনে সাবিত(রা.) পবিত্র কুরআন সর্বপ্রথম গ্রন্থকারে সংকলন করেন। এটাই ছিলো সর্বপ্রথম গ্রন্থকারে লিপি- বদ্ধ আল-কুরআন। কুরআনের এই কপিটি আবু বকর (রা.)-এর নিকট সংরক্ষিত ছিলো। তাঁর ইন্তিকালের পর এটি হযরত উমর (রা.)-এর তত্বাবধানে সংরক্ষিত ছিলো। হযরত উমর (রা.)-এর শাহাদতেরর পর এ পান্ডুলিপিটি তাঁর কন্যা, উম্মুল মুমিনিন হযরত হাফসা (রা.)-এর নিকট সংরক্ষিত ছিলো। 
*** 
এমতাবস্থায় হযরত উছমান (রা.) প্রধান সাহাবিগণের পরামর্শক্রমে কুরআন সংকলনের জন্য চারজন সাহাবির একটি বোর্ড গঠন করেন। হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা.) সর্বপ্রথম হযরত হাফসা(রা.)-এর নিকট থেকে কুরআনের প্রথম পান্ডুলিপিটি নিয়ে আসেন এবং এ থেকে আরো সাতটি কপি তৈরি করেন। অনুলিপি তৈরিতে সাহাবিগণ হাফিযগণের কেরাতের সাথে মিলিয়ে পুনরাই এর নির্ভুলতা যাচাই করতেন। অতপর মূল কপিটি হযরত হাফসার (রা.) নিকট ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তৈরি অনুলিপিগুলোর একটি খলিফার নিকট কেন্দ্রে সংরক্ষন করা হয় আর বাকি গুলো বিভিন্ন শাসনকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আল-কুরআন বিকৃতি ও গরমিলের হাত থেকে রক্ষা পায়। 
*** 
আল-কুরআনের এ সংকলনসমূহে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নির্দেশনার কোররুপ পরিবর্তন করা হয়নি।বরং মহানবি (স.) যেভাবে কোন আয়াতের পর কোন আয়াত হবে বলে গেছেন ঠিক সেভাবেই সংকলন করা হয়। এভাবে সূরাসমূহেও রাসুলুল্লাহ (স.) বর্ণিত ধারাবিহিকতা রক্ষা করে সাজানো হয়। বস্তুত আল্লাহ তায়ালাই জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে কোন সুরা কোথাই স্থাপন করতে হবে তার ধারাবাহিকতার শিক্ষা দিয়েছিলেন। 
*** 
লাওহে মাফুজে যেভাবে, আল-কুরআন বিন্যস্ত রয়েছে বর্তমান আল-কুরআন ও ঠিক সে বিন্যাসেই বিদ্যমান রয়েছে। 
"আমিন"

No comments

Powered by Blogger.