ইসলাম প্রচারক ভাই! প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দিন (পর্ব-২)

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে- 
লিখেছেনঃ শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রহ:)  অনুবাদ : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

অধিকাংশ মুসলিম ভালো করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ কি তা জানে না।

অধিকাংশ মুসলিম যারা এ কথার সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তারা প্রকৃত পক্ষে এ কথার সত্যিকার অর্থ কি তা জানে না। বরং অনেক সময় দেখা যায়, তারা সম্পূর্ণ উল্টা ও বিপরীত অর্থই জানে। এর একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করব, এক লোক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র অর্থ সম্পর্কে একটি রিসালা লিখেন। তাতে তিনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র ব্যাখ্যা করেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন রব নাই’।
এ অর্থটি এমন একটি অর্থ যার প্রতি মুশরিকরাও ঈমান আনত এবং তারা তা স্বীকার করত: কিন্তু তা সত্বেও তাদের এ ঈমান তাদের কোন উপকারে আসে নাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। [সূরা লোকমান, আয়াত: ২৫]
মুশরিকরা এ কথা বিশ্বাস করত যে, এ জগতের একজন স্রষ্টা আছে, যার কোন শরিক নাই, কিন্তু তারা আল্লাহর সাথে শরিক সাব্যস্ত এবং ইবাদাতে তারা তার সাথে শিরক করত। তারা বিশ্বাস করত, রব এক কিন্তু তারা বিশ্বাস করত ইলাহ অসংখ্য। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের এ বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং একে গাইরুল্লাহর ইবাদাত বলে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা কেবল এজন্য তাদের ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। [সূরা যুমার, আয়াত: ৩]
মুশরিকরা এ কথা ভালো করেই জানত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার অর্থ হল, আল্লাহ ছাড়া যত ইলাহের ইবাদাত করা হয় তা হতে দায়মুক্তি ঘোষণা করা। কিন্তু বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলিম কালিমায়ে তাইয়্যেবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ কি তা জানে না। ফলে তারা কালিমাকে স্বীকার করে এবং সাথে গাইরুল্লাহর দাসত্বও করে। আবার অনেকেই কালিমার ব্যাখ্যা করে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রতিপালক নাই। এ অর্থ সম্পূর্ণ ভুল। যখন কোন মুসলিম কালিমা তাইয়্যেবা لا إله إلا الله  বলে এবং সে আল্লাহর সাথে গাইরুল্লাহর ইবাদাত করে, তাহলে তার মধ্যে ও একজন মুশরিকের মধ্যে বিশ্বাসগত দিক দিয়ে কোন পার্থক্য নাই। বাহ্যিক দিক দিয়ে সে যদিও একজন মুসলিম, কারণ, সে কালিমা لا إله إلا الله উচ্চারণ করে, কিন্তু বাস্তবে সে মুসলিম নয়। এ ধরনের লোক যারা কালিমার অর্থ জানে না, আমাদের ইসলাম প্রচারক ভাইদের কর্তব্য হল তাদেরকে প্রথমে তাওহীদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া এবং কালিমার অর্থ কি তার উপর দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করা। তবে মুশরিকদের অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কালিমা لا إله إلا الله বলাকেই অস্বীকার করে। ফলে তারা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন উভয় দিক বিবেচনায় তারা মুশরিক, তারা কোন বিবেচনায় মুসলিম হতে পারে না। তবে বর্তমানে মুসলিম জনগোষ্ঠিকে মুসলিম ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আর যখন তারা এ কালিমা মুখে বলে, তখন তাদের জান ও মাল আমাদের নিকট নিরাপদ। তবে এ কালিমার অধিকার তার উপর বর্তালে ভিন্ন কথা, আর তাদের হিসাব আল্লাহর নিকট
[বুখারি কিতাবুল জিহাদ, ২৭৮৬, মুসলিম কিতাবুল ঈমান ২১, তিরমিযি কিতাবুল ঈমান, ২৬০৬, নাসায়ী তাহরীমুত দম।] [হাদিসটি বিশুদ্ধ বুখারি হাদিসটি বর্ণনা করেন, মুসলিম, ২২]


এ কারণেই আমি একটি কথা বলব – যা আমার থেকে খুব কমই শোনা যায়। তা হল, বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলমানদের অবস্থা জাহিলিয়্যাতের যুগের মুসলিমদের অবস্থার তুলনায় অনেক খারাপ। বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলিম এ কালিমার বিশুদ্ধ অর্থ সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না। পক্ষান্তরে তৎকালীন যুগের আরবরা কালিমার অর্থ কি তা জানত ও বুঝত, কিন্তু তারা তাতে বিশ্বাস করত না। আর বর্তমান যুগের মুসলিমরা যা বিশ্বাস করে না, তা বলতে তারা কোন প্রকার দ্বিধা করে না। তারা لا إله إلا الله বলে, কিন্ত তারা প্রকৃত অর্থের উপর ঈমান আনে না [তারা কবরের ইবাদাত করে, গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করে, মৃতদের ডাকে।]

এ কারণেই আমি মনে করি সত্যিকার মুসলিম দীন প্রচারকদের প্রথম কর্তব্য হল, তারা মানুষকে এ কালিমার দাওয়াত দিবে এবং এ কালিমার মর্মার্থ কি তা তুলে ধরবে। তারপর এ কালিমার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে এবং যাবতীয় ইবাদাত বন্দেগীতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণ বিষয়ে দাওয়াত দিবে। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুশরিকদের আলোচনা করতে গিয়ে তাদের অবস্থার বর্ণনা তুলে ধরেন,
আমরা কেবল এ জন্যই ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। [সূরা যুমার, আয়াত: ৩]

আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব ইবাদাত গাইরুল্লাহর জন্য করা হয়, তাকে কালিমায়ে তাইয়্যেবার সাথে কুফরী বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ কারণেই আমি বলি, বর্তমানে কালিমা তাইয়্যেবার সঠিক অর্থ সম্পর্কে মুসলিমদের না দাওয়াত দিয়ে, গোমরাহিতে রেখে মুসলিমদের একত্র করা ও তাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি কর্মে কোন ফায়েদা নাই। এ দ্বারা একজন মুসলিম দুনিয়াতেও লাভবান হতে পারবে না এবং আখেরাতেও না। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী সম্পর্কে অবশ্যই জানি, তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি মারা যায় এবং সে তার অন্তর থেকে খালেস ভাবে এ কথার সাক্ষী দেয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার দেহকে জাহান্নামের উপর হারাম করে দেয় [আহমদ: ১২/৩]।

অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”
[বুখারি কিতাবুল লিবাস: ৫৪৮৯] [হাদিসটি বিশুদ্ধ, বর্ণনা করেছেন ইবনে হিব্বান, আহমাদ, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]

সুতরাং, যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে এ কালিমা বলবে, তার জন্য অবশ্যই জান্নাতের জিম্মদারি গ্রহণ করা যাবে, যদিও তার জান্নাতে প্রবেশ করা, আযাব বা শাস্তি ভোগ করার পর হবে। যদি কোন ব্যক্তি এ কালিমার সঠিক অর্থকে বিশ্বাস করে এবং সে কোন অপরাধ করে থাকে, তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে তার গুণাহ ও অন্যায়ের কারণে শাস্তি দেবে, কিন্তু আযাব ভোগ করার পর তার গন্তব্য হবে জান্নাত। আর যে ব্যক্তি কালিমার মর্মার্থকে বিশ্বাস করে না, তার গন্তব্য হবে জাহান্নাম। কোন ব্যক্তি শুধু মুখে এ কালিমা উচ্চারণ করল, কিন্তু তার অন্তরে ঈমান নাই, তাহলে তার জন্য এ কালিমা দুনিয়াতে কিছু সমস্যা হতে তাকে মুক্তি দিলেও আখেরাতে সে মুক্তি পাবে না। অর্থাৎ, যখন দুনিয়াতে মুসলিমদের ক্ষমতা থাকবে, তখন তাকে হত্যা করা হবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে না। কিন্তু আখেরাতে এ কালিমার উচ্চারণ করা তার কোন উপকারে আসবে না। হ্যাঁ, যদি সে এ কালিমার অর্থ বুঝে, তারপর এ কালিমার অর্থের উপর বিশ্বাস রাখে, তখন এ কালিমা [আখেরাতে] তার উপকারে আসবে।  কারণ, শুধু কালিমার অর্থ বুঝা নাজাত পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, তবে এ কালিমার অর্থের সাথে ঈমান ও বিশ্বাস থাকতে হবে। তখনই এ কালিমা মানুষের কাজে লাগবে এবং উপকারে আসবে। আমার ধারণা মতে অধিকাংশ মানুষ এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞ। অর্থাৎ, শুধু কালিমার অর্থ বুঝার নাম ঈমান নয়, বরং মুমিন হওয়ার জন্য কালিমার অর্থের সাথে সাথে মুখে স্বীকার করাও একত্র হতে হবে। যখন দুটি জিনিস একত্র হবে, তখনই ঈমানদার হবে। কারণ, আহলে কিতাব যারা তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত ও রিসালাতের যে দাওয়াত নিয়ে এসেছে, তা সম্পর্কে তার ভালো ভাবেই জানে। কিন্তু তাদের এ জানা তাদের কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছে, তারা তাকে চিনে যেমন চিনে তাদের সন্তানদেরকে। [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৪৬]

কেন উপকারে আসবে না? কারণ, তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত ও রিসালাতের যে দাওয়াত দিচ্ছে, তা অস্বীকার এবং প্রত্যাখ্যান করছে। সুতরাং, ঈমানের পূর্বে শুধু আল্লাহর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা কোন উপকারে আসবে না। বরং, এ জ্ঞানের সাথে ঈমান ও বিশ্বাস দুটি জিনিস জরুরি। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
“অতএব জেনে রাখ, নি:সন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তুমি তোমার গুণাহের জন্য ক্ষমা চাও”। [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৯]

এর উপর ভিত্তি করে, আমরা বলব, যখন কোন মুসলিম মুখে لا إله إلا الله বলে তাকে অবশ্যই এ কালিমার সার সংক্ষেপ সম্পর্কে অবগত হতে হবে, তারপর এর বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে জানতে হতে হবে। যখন কোন মানুষ কালিমার বিষয় বস্তু সম্পর্কে অবগত হল, তারপর সে তা বিশ্বাস করল এবং তার উপর ঈমান আনল, তা হলে তার বিষয়ে পূর্বে উল্লিখিত হাদিসগুলো প্রযোজ্য হবে। সে হাদিসের ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কালিমার বিস্তারিত অর্থের প্রতি ইংঙ্গিত করে বলেন,
অর্থ: যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, এ কালিমা তার জীবনের কোন না কোন একটি সময় তার উপকার করবে [হাদিসটি বিশুদ্ধ আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]।
অর্থাৎ, এ কালিমায়ে তাইয়্যেবার অর্থ জানা ও তার উপর বিশ্বাস করার ফলে কালিমা অবশ্যই তাকে চির জাহান্নামী হওয়া থেকে নাজাত দেবে। যদিও কালিমার চাহিদা অনুযায়ী নেক আমলসমূহ সে করতে পারে নাই এবং গুণাহসমূহ হতে বিরত থাকতে পারে নাই। কিন্তু সে শিরকে আকবর থেকে মুক্ত থাকছে, কালিমার চাহিদা অনুযায়ী অন্তরের আমল ঠিক ছিল এবং আহলে ইলমদের ইজতিহাদ মোতাবেক ঈমানের জন্য নির্ধারিত শর্তসমূহের যাবতীয় শর্তসমূহ সে পালন করছে। এ মাসআলাটিতে আরও অনেক তাফসীল ও ব্যাখ্যা আছে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ নাই।[এ হল, সালফে সালেহীনের আকীদা। আর এটিই আমাদের মাঝে ও খারেজি ও মুরজিয়াদের প্রার্থক্যের মানদণ্ড।]

এ লোকটি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করতে হবে, সে যে সব অপরাধ ও অন্যায় করছে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করছে তার বিনিময়ে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। জাহান্নামে অবস্থান করার পর এ কালিমায়ে তাইয়্যেবা তাকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেবে অথবা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার অনুগ্রহ দ্বারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। পূর্বে উল্লেখিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীর অর্থ এটাই। من قال: لا إله إلا الله، نفعته يومًا من دهره، যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, এ কালিমা তার জীবনের কোন না কোন একটি সময় তার উপকার করবে।

আর যারা এ কালিমা মুখে বলে, কিন্তু তার অর্থ কি তা জানে না, অথবা তার অর্থ কি তা জানে, তবে তার অর্থের প্রতি বিশ্বাস করে না, তারা লা ইলাহা ইল্লাহ বলা দ্বারা আখেরাতে কোন উপকার লাভ করতে পারবে না। তবে দুনিয়াতে যদি সে ইসলামী শাসনের আওতায় বসবাস করে, তখন সে উপকৃত হতে পারবে। এ কারণেই আমরা বলি, প্রতিটি সমাজে মানুষকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়ার উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। অনুরূপভাবে যারা ইসলামী আন্দলোনের নামে কাজ করে সত্যিকার ইসলামী রাষ্ট্র বা সমাজ গঠন করতে চায় এবং যেখানে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা হয় না সেখানে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে চায়,  তাদের সবাইকে প্রথমে তাওহীদের উপর দাওয়াত দেয়ার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় তারা আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার অভিষ্ট লক্ষে পৌছতে পারবে না। তাদেরকে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতদেরকে মুক্তি দেয়ার জন্য যে দাওয়াত শুরু করেছিল, সে দাওয়াত দিয়েই শুরু করতে হবে।

আক্বীদার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়ার অর্থ শরীয়তের অন্যন্য আমল ইবাদাত আখলাক ও মুয়ামালাত ছেড়ে দেয়া নয়।

আমি একটি বিষয় আবারও সতর্ক করছি, আকীদা বা কালিমায়ে তাইয়্যেবার সঠিক অর্থ বুঝানোর প্রতি দাওয়াত দেয়ার কথা বলা দ্বারা প্রথমে আকীদা যা অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তারপর যা কম গুরুত্বপূর্ণ তার দাওয়াত দিতে হবে, এমন কোন কথা আমি বলছি না। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং তার নিয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করেছেন; এখানে কোনটিকে বাদ দিয়ে দাওয়াত দেয়া বা দাওয়াতের কাজ করার সুযোগ নাই। বরং আল্লাহর দেয়া দ্বীনের পরিপূর্ণ  আনুগত্য করতে হবে এবং পরিপূর্ণ দ্বীনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে।  আমি যখন এ বয়ান করি, যার সারাংশ হল, ইসলামের সত্যিকার প্রচারকরা এমন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে, যাকে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে এবং যা নিয়ে দুনিয়াতে ইসলামের আগমন ঘটেছে, আর তা হল কালিমায়ে তাইয়্যেবা থেকে নির্গত অর্থ- আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার ইলাহ নাই- বা বিশুদ্ধ আকীদা, তখন আমি আমার বয়ানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলি, আমার কথা দ্বারা আমার উদ্দেশ্য এ নয় যে, একজন মুসলিম শুধু কালিমার অর্থ- আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নাই- তা জানবে, বরং তাকে কালিমার অর্থ জানার সাথে সাথে এ কথাও জানতে হবে, যে সব ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে, সে সব ইবাদাতের কোন অংশকে গাইরুল্লাহ বা আল্লাহর কোন মাখলুকের জন্য সোপর্দ করা যাবে না এবং এমন কোন ইবাদাতে আল্লাহর সাথে আল্লাহর বান্দাদের থেকে কোন বান্দাকে শরিক করা যাবে না। এ ব্যাখ্যাটি অবশ্যই কালিমায়ে তাইয়্যেবার সংক্ষিপ্ত অর্থের সাথে একত্র করতে হবে। এখানে সুন্দর হয়, কথাটি বুঝানোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত বা একাধিক দৃষ্টান্ত যা আমার জন্য সম্ভব হয়- বর্ণনা করা, যাতে বিষয়টি বুঝতে সহজ হয়। কারণ, সংক্ষিপ্ত আলোচনা বিষয়টি বুঝার জন্য যথেষ্ট নয়।

আমি বলি, অধিকাংশ মুসলিম যারা সত্যি সত্যি একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং তারা তাদের ইবাদাতসমূহ একমাত্র আল্লাহর জন্য করে, গাইরুল্লাহর জন্য করে না, তাদের অন্তর সমূহ কুরআন ও সুন্নাহে যে সব সঠিক আক্বীদা ও বিশুদ্ধ চিন্তা-চেতনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হতে শূণ্য। তাওহীদে বিশ্বাসী ও সঠিক আকীদার ধারক-বাহক অনেককে দেখা যায়, তারা যখন বিশুদ্ধ আকীদা সম্বলিত কুরআনের আয়াত বা হাদীসের বাণীসমূহ তাদের সামনে আসে, তখন তারা আয়াত ও হাদীসের মর্মার্থ সম্পর্কে সতর্ক হয় না এবং বুঝতে সক্ষম হয় না। অথচ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার জন্য এসব আয়াতসমূহ ও হাদীসের বাণীসমূহ বুঝার কোন বিকল্প নাই। ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সৃষ্ট মাখলুকাতের উপর আছেন’ এ বিষয়ে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে একটি দৃষ্টান্ত বলছি,  তাতে তোমরা চিন্তা করে দেখ!  তাওহীদে বিশ্বাসী অধিকাংশ সালাফী ভাইরা এ কথা বিশ্বাস করে কোন প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও পদ্ধতি নির্ধারণ ছাড়া যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরশের উপর আছেন। কিন্তু যখন তারা কোন মুতাযিলা, জাহমিয়্যাহ, মাতুরিদি বা আশয়ারীদের মুখোমুখি হয় এবং তারা আয়াতের বাহ্যিক অর্থের উপর এমন কোন প্রশ্ন উত্থাপন বা যুক্তি তুলে ধরে, যার অর্থ তারাও বুঝে না এবং যাদের নিকট উত্থাপন করল, তারাও বুঝেনা, তখন তারা তাদের বিশ্বাস ও আকীদা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং দ্বিধা-দন্দ্বে পড়ে। এর কারণ কি? এর কারণ, মুলত: তারা সহীহ আকীদাকে আমাদের রবের কিতাব ও আমাদের নবীর সুন্নাত হতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে শিখে নাই। যখন একজন মুতাজেলা বলে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
“যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের সহ যমীন ধসিয়ে দেয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ”। [সূরা মুলুক, আয়াত: ১৬,১৭]

আর তোমরা বল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আসমানে। এর অর্থ হল, তোমরা তোমাদের মাবুদকে আল্লাহর মাখলুক আসমান নামক পাত্রে রাখছ। কারণ, সে তার সামনে যাদের পায় তাদেরকে একটি সন্দেহ সংশয়ে ফেলে দেয়।

অনেক ঈমানদারের নিকট সহীহ আকীদা ও তার জরুরি বিষয়গুলো অস্পষ্ট থাকার বর্ণনা : এ দৃষ্টান্ত দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হল, দু:খ প্রকাশ করা এবং এ কথা বর্ণনা করা যে, অধিকাংশ লোক যারা সালফী আক্বীদায় বিশ্বাসী তারা নিজেরা বিশুদ্ধ আকীদা, আকীদার জরুরি বিষয় ও তার আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো কি তা জানে না। তাহলে যারা ভিন্ন আকীদার পোষণ করে বা যারা আশয়ারী, মাতুরিদি ও জাহমীয়া তারা যদি সহীহ আক্বীদা কি তা না জানে তাদের সম্পর্কে কি বলার আছে?। মোট কথা, আমি বলব, আমাদের সাথে যারা মানুষকে কিতাব ও সুন্নাতের দিকে দাওয়াত দেয়, তাদের জন্য বিষয়টি তারা যেমন সহজ মনে করেন তেমনটি সহজ নয়। বরং বিষয়টি কঠিন আছে। এর কারণ আমরা আগেই উল্লেখ করছি, বর্তমান যুগের জাহিলিয়্যাত এবং পূর্ব যুগের জালিয়্যাতের মধ্যে পার্থক্য আছে। জাহিলিয়্যাতের যুগের কাফেরদের যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার জন্য দাওয়াত দেয়া হত, তখন তারা তা বলতে অস্বীকার করত। আর বর্তমান অধিকাংশ মুসলিম তারা এ কালিমা মুখে বলে, কিন্তু এর সঠিক অর্থ কি তা জানে না। এ মৌলিক পার্থক্যটি সর্ব ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত, এমনকি এ সব আকীদা-আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সমগ্র মাখলুকাতের উপর হওয়া- বিষয়েও তা পরিলক্ষিত। তবে এখানে একটি ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ, একজন মুসলিমের জন্য এ কথা বিশ্বাস করা ঠিক হবে না যে, আল্লাহ আসমানে স্থান গ্রহণ করেছেন। তাকে অবশ্যই এ কথা জানতে হবে, হাদীসের মধ্যে উল্লেখিত ফী শব্দটি এখানে স্থানের জন্য নয়।ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء   তোমরা জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছে, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন [তিরমিযি কিতাবুল বির ওয়াস সিলা ১৯২৪, আবু দাউদ কিতাবুল আদব: ৪৯৪১]।

এখানে হাদীসটিতে ফী শব্দটির অর্থ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বাণী-  ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ  [طـه:5].  তে ‘আলা শব্দেরও ঠিক একই অর্থ। অর্থাৎ, ফী শব্দের অর্থ এখানে ‘আলা। এর আরেকটি দৃষ্টান্ত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বাণী- ءَأَمِنتُم مَّن فِي ٱلسَّمَآءِ أَن يَخۡسِفَ بِكُمُ ٱلۡأَرۡضَ [سورة الملك: الآيتان 15-16] ] [যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের সহ যমীন ধসিয়ে দেয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ,] এখানে ফী শব্দটির অর্থ ‘আলা।

এর উপর অসংখ্য দলীল রয়েছে। এর একটি দলীল হল, মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধ উল্লেখিত হাদিস। আল্লাহর শুকর, হাদিসটি সব সনদেই বিশুদ্ধ। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী ارحموا من في الأرض এর অর্থ শুধু যে সব কিট প্রতঙ্গ জমিনের অভ্যন্তরে আছে, তা নয়, বরং যে সব জীব-জন্তু, মানুষ ও হাইওয়ান জানোয়ার জমিনের উপরে আছে, সেগুলোকেও বোঝানো হয়েছে। অনুরুপভাবে يرحمكم من في السماء এর অর্থও একই। এখানে ফী শব্দের অর্থ উপর। আর মনে রাখতে হবে, এ ধরনের ব্যাখ্যা ও জ্ঞান যারা হকের দাওয়াত দিতে পছন্দ করে, তাদের জন্য আবশ্যক। তারা অবশ্যই দলীল প্রমাণের উপর অঢেল জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে, যাতে কোন প্রকার প্রশ্ন বা যুক্তি তাদেরকে তাদের বিশ্বাস থেকে চুল পরিমাণও সরাতে না পারে। এ ধরনেরই একটি হাদীস হল, একজন মহিলা যে ছাগল চরাতো। হাদীসটি সবার নিকট প্রসিদ্ধ। আমি এ হাদীস থেকে যে বিষয়টি উল্লেখ করব, সেটি হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাকে জিজ্ঞাসা করল, আল্লাহ কোথায়? উত্তরে মহিলাটি বলল, আল্লাহ আসমানে। এখন যদি তুমি জামেয়া আজহারের বড় শেখকে জিজ্ঞাসা কর, আল্লাহ কোথায়? তখন সে উত্তরে তোমাকে বলবে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। অথচ, উক্ত মহিলা উত্তর দিল, আল্লাহ আসমানে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরকে গ্রহণ করলেন। কারণ!  মহিলাটি ফিতরাতের ভিত্তিতে উত্তর দেন।
আর বর্তমান সময়ের সাথে মিলিয়ে বলল, আমাদের পরিভাষায় বললে বলতে হয়, সে সালাফী পরিবেশে বসবাস করত, কোন খারাপ পরিবেশ তাকে স্পর্শ করেনি। কারণ সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাদরাসা হতে ডিগ্রি লাভ করেছে, যে মাদরাসা কোন বিশেষ কতক পুরুষ বা নারীর জন্য খাস ছিল না। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাদরাসা সব মানুষের জন্য উম্মুক্ত ছিল। এখানে নারী, পুরুষ ও সমাজের সব মানুষ শিক্ষা লাভ করতে পারত। এ কারণেই একজন ছাগলের পাহারাদার মহিলা বিশুদ্ধ আকীদা কি তা জানত। কারণ, সে কোন খারাপ পরিবেশের সাথে মিশেনি, ফলে সে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সহীহ আকীদা জানত, অথচ বর্তমানে যারা কুরআন ও হাদীসের বড় বড় আলেম বলে দাবী করে, তাদের অধিকাংশ লোক এ কথা জানে না যে, তাদের রব কোথায়? অথচ কুরআন ও হাদীসে বিষয়টি স্পষ্ট করা আছে। আজ আমি বলব,  মুসলিমদের জন্য এর চেয়ে স্পষ্ট আর কোন কিছুই পাওয়া যাবে না যে, যখন কোন একজন উম্মতের কর্ণধার বা উম্মতের পথ প্রদর্শককে জিজ্ঞাসা কর, আল্লাহ কোথায়? তখন সে এ কথার জবাব দিতে গিয়ে, হতভম্ব হয়ে যাবে, যেমনটি হতভম্ব হবে বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম। একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাদের অনুগ্রহ করেছেন তদের ছাড়া।
চলবে……।
 

No comments

Powered by Blogger.