ইসলাম প্রচারক ভাই! প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দিন (পর্ব-৩)

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে- 
 
লিখেছেনঃ শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রহ:)  অনুবাদ : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সহীহ আকীদার প্রতি দাওয়াত দেয়ার জন্য প্রয়োজন অবিরাম সংগ্রাম ও আপ্রাণ চেষ্টা

একটি কথা মনে রাখতে হবে, তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দেয়া এবং বিশুদ্ধ আকীদাকে মানুষের অন্তরে গেঁথে দেয়ার জন্য প্রয়োজন হল,
প্রথমত: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সাহাবীদের মত কুরআনের আয়াতসমূহের বাহ্যিক অর্থকে গুরুত্ব দেয়া। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সাহাবীরা আরবী ভাষা সহজেই বুঝতে পারত। ফলে তাদের জন্য কুরআন থেকে বিশুদ্ধ আকীদা জানা ও শেখা সহজ ছিল।
দ্বিতীয়ত: তাদের যুগে মানতেক, হিকমত, ফালসাফা ও ইলমে কালাম ইত্যাদি না থাকার কারণে, আকীদা বিষয়ে কোন প্রকার বক্রতা বা বিকৃতি ছিল না এবং আকীদার পরিপন্থি কোন বিষয় নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তর্ক-বিতর্ক ছিল না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের পরিবেশ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের মুসলমানদের পরিবেশের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুতরাং, এ কথা ধারনা করা যাবে না যে, বর্তমানে মানুষকে বিশুদ্ধ আকীদার প্রতি দাওয়াত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের মত সহজ। এ বিষয়ে কাছকাছি দুটি দৃষ্টান্ত পেশ করব, যাতে কেউ দ্বি-মত পোষণ করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সাহাবীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি হাদিস শুনতো, তারপর তাবেয়ীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের থেকে সরাসরি হাদিস শুনতো, এভাবে তিনটি যুগ অতিবাহিত হয়, যাদের যুগকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এখন আমি প্রশ্ন করব, তখন কি এমন কোন ইলম ছিল, যাকে ইলমে হাদীস বলা হত? উত্তরে অবশ্যই বলতে হবে, না। এখানে এমন কোন ইলম ছিল, যাকে ইলমে জারহ বা তাদিল বলা হত? উত্তরে বলতে হবে, না। কিন্তু বর্তমানে তালেবে ইলমদের জন্য এ দুটি ইলম অবশ্যই জানা থাকতে হবে। এ দুটি ইলম শিক্ষা করা ফরজে কিফায়া। এ দুটি ইলম জানা দ্বারা একজন আলেম জানতে পারবে হাদীসটি সহীহ নাকি দূর্বল বা হাদীসটির উপর আমল করা যাবে, নাকি যাবে না। সুতরাং বর্তমানে বিষয়টি এত সহজ নয়, যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সহজ ছিল। কারণ, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেতে সরাসরি হাদীস শুনতে পেত, তাদের জন্য জারাহ ও তাদীলের ইলম শিখার প্রয়োজন হত না। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে বিষয় যেভাবে সহজ ছিল, বর্তমানে বিষয়টি তেমনটি সহজ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ইলম ছিল খালেস, তার মধ্যে কোন প্রকার অবকাশ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে আমরা যারা মুসলিম, তারা বিভিন্ন সমস্যার বেড়া জালে আবর্তিত। তাই আমরা যখন মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি দাওয়াত দিয়ে থাকি, তখন আমাদেরকে অবশ্যই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। আমাদের এ সব সমস্যার কারণে আমাদের আকীদার বিষয়গুলো বিদআতি ও আহলে কালামীদের পক্ষ হতে নানাবিদ প্রশ্নের সম্মুখীন।

এ বিষয়ে বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত কিছু বিষয় আলোচনা করা ভালো মনে করি। যেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঐ সব হাদীসগুলো উল্লেখ করেন, তাদের কারো কারো পঞ্চাশ গুণ সাওয়াব দেয়া হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«للاحد منهم خمسون من الأجر “، قالوا: منا يا رسول الله أو منهم ؟ قال: ” منكم. »
“তাদের মধ্য হতে কোন একজনকে পঞ্চাশ গুণ বেশি সাওয়াব দেয়া হবে”।
সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের থেকে নাকি তাদের থেকে? রাসূল বলল, তাদের থেকে। 
[আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ হতে হাদিসটি তাবরানী বর্ণনা করেন। হাদীসটি বিশুদ্ধ। আল্লামা আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। আবু দাউদ ৩৪৪১]

বর্তমানে ইসলামের যে পরিণতি, এই পরিণতি ইসলামের প্রথম যুগে ছিল না। কারণ, ইসলামের প্রথম যুগের সংঘর্ষ ছিল, স্পষ্ট শিরক ও নীরেট তাওহীদের মাঝে এবং প্রকাশ্য কুফর আর প্রকৃত ঈমানের মাঝে। বর্তমানে মুসলিমদের নিজেদের সমস্যাই প্রকট। অধিকাংশ মুসলিমের তাওহীদ শিরক মিশ্রিত। তারা তাদের ইবাদাত বন্দেগীকে গাইরুল্লাহর জন্য নিবেদিত করে কিন্তু মুখে ঈমানের দাবি করে।
প্রথমত এ বিষয়টি জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।
দ্বিতীয়ত আমাদেরকে জানতে হবে, আমাদের এ কথা বলা উচিত হবে না, আমাদের তাওহীদের ধাপকে বাদ দিয়ে ভিন্ন ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ, রাজনৈতিক কর্ম-কাণ্ড চালিয়ে যাওয়া। কারণ, ইসলামের দাওয়াত দেয়াই হল, সত্য দাওয়াত। সুতরাং, আমাদের এ কথা বলা ঠিক হবে না, আমরা আরব । কুরআন আমাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। কারণ, আমাদের মনে রাখতে হবে, অনারব যারা আরবী ভাষা শিখেছে, তারা আরবদের তুলনায় কুরআন হাদীস জানা ও বুঝা সম্পর্কে অধিক অগ্রসর। কারণ, আরবরা তাদের নিজেদের ভাষা জানা ও বুঝা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। ফলে তারা তাদের রবের কিতাব ও তাদের নবীর সুন্নাত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন হতে অনেক দূরে সরে আছে।

আমরা আরবরা সহীহ ইসলাম কি তা শিখেছি। সুতরাং আমাদের জন্য উচিত হবে না এমনভাবে রাজনৈতিক কর্ম-কাণ্ডে জড়িত হওয়া এবং মানুষকে রাজনৈতিক কাজে জড়িত হওয়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা যাতে মানুষের জন্য যে কাজ করা জুরুরি যেমন ইসলাম সম্পর্কে জানা, সঠিক আকীদা সম্পর্কে জানা, মুয়ামালা সম্পর্কে জানা ইত্যাদি তা হতে মানুষকে বিরত রাখা হয়। আমরা এ কথা বিশ্বাস করি না যে, আমাদের দেশে সব জনগণ, সঠিক ইসলাম অর্থাৎ বিশুদ্ধ আকীদা, ইবাদাত ও আখলাক সম্পর্কে জানে এবং তারা তার উপর অভ্যস্থ।

পরিবর্তনের মূল হল, সংস্কার ও তারবীয়তের প্রদ্ধতি অবলম্বন করা

এ কারণেই আমরা সব সময় – হক প্রতিষ্টার জন্য- দুটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি আহ্বান করি এবং অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর তা হল, সংস্কার ও তারবীয়ত। সংস্কার ও আন্দোলন দুটি এক সাথে হওয়া জরুরি।  যদি কোন দেশে আকীদার বিষয়ে সংস্কার পাওয়া যায়, তাহলে তাকে অবশ্যই বড় ও মহান কাজ ধরা হবে যে,  ইসলামী সমাজের একটি অংশে বা কতক মুসলিম জন গোষ্টির মধ্যে আকীদার সংশোধন ও সমাজ সংস্কারের মত একটি কাজ চলছে। আর ইবাদাতের ক্ষেত্রে বলতে হয়, ইবাদাতকে মাযহাবীয়ত ও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে রাখতে হবে এবং বিশুদ্ধ হাদীস নির্ভর করতে করতে হবে। বর্তমানে মুষ্টিময় কতক ওলামায়ে কেরাম আছে, যারা ইসলামকে পরিপূর্ণ ও বিশুদ্ধভাবে বুঝতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি, একজন, দুই জন, তিন জন বা দশজন মুষ্টিময় লোকের বিশুদ্ধ বা পরিপূর্ণ ইসলাম বোঝার দ্বারা ইসলামের মধ্যে আকীদা বিশ্বাস, ইবাদাত বন্দেগী বা আখলাকের ক্ষেত্রে যে ময়লা আবর্জনা প্রবেশ করছে, তা পরিস্কার বা সংস্কার করার দায়িত্ব আদায় করা সম্ভব নয়। ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করা কু-সংস্কারের সংস্কার ও ইসলামী সমাজে বসবাসকারী অসংখ্য জন গোষ্টিকে বিশুদ্ধ আকীদার উপর উঠানো ও  তাদের সঠিক পথে পরিচালনার মত মহান দায়িত্ব আদায় করার জন্য স্বল্প সংখ্যক লোকের প্রচেষ্টা ও ত্যাগ যথেষ্ট নয়। তাদের দ্বারা এত বড় দায়িত্ব আদায় করা সম্ভব নয়। মোট কথা, সংশোধন ও তারবীয়ত বর্তমানে একে বারে শূন্যের ঘরে অবস্থান করছে।

যে কোন মুসলিম সমাজ যেখানে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী সমাজ পরিচালিত হয় না, উল্লেখিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বাস্তবায়ন ছাড়া রাজনৈতিক আন্দোলন করার পরিণতি কখনো শুভ হবে না। বরং এর খারাব প্রভাব মানুষকে পিছিয়ে দেয়। তবে পরামর্শের মাধ্যমে অথবা শরীয়ত সম্মত বিধি বিধানের আলোকে উত্তম পদ্ধতিতে নছিহত করা, কোন প্রকার বাধ্য করা বা মিটিং মিছিল করা ছাড়া রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। মানুষের নিকট দাওয়াত পৌছে দিলে তাদের বিপক্ষে হুজ্জত কায়েম করা, দায়িত্ব ও জিম্মাদারি আদায় হতে মুক্তি পাওয়া যাবে। আরও উপদেশ হল, মানুষকে এমন সব কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে, যা তাদের উপকারে আসে। তাদের আকীদা শুদ্ধ করতে হবে, ইবাদাত বন্দেগী, আখলাক ও মুয়ামালাত ঠিক করতে হবে। অনেকে বলে আমরা মুসলিম সমাজে বিশুদ্ধ আকীদা ও তালীম তারবীয়ত বাস্তবায়ন করতে চাই! তবে এটি এমন একটি বিষয় যে কাজটি দ্বারা আকীদার বাস্তবায়ন বিষয়ে আমরা কোন চিন্তাও করি না এবং স্বপ্নও দেখি না। কারণ, এ সবের মাধ্যমে বিশুদ্ধ আকীদার বাস্তবায়ন কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ ٱلنَّاسَ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخۡتَلِفِينَ ١١٨ ﴾  [سورة هود: 118].
যদি তোমার রব চাইতেন, তবে সকল মানুষকে এক উম্মতে পরিণত করতেন, কিন্তু পরস্পর মত বিরোধকারী রয়ে গেছে, [সূরা হুদ, আয়াত: ১১৮]

এদের বিষয়ে আমাদের রবের কথা বাস্তবায়ন হয় না, তবে যদি তারা ইসলামকে বিশুদ্ধরূপে বুঝতে পারে এবং তারা তাদের নিজেদের, পরিবার পরিজন এবং তাদের আশ পাশে যারা আছে, তাদেরকে সহীহ ইসলামের উপর লালন-পালন করে, তখন আমাদের রবের কথার প্রতিফলন হবে।

কারা রাজনৈতিক কর্ম কাণ্ডের সাথে জড়িত হবেন এবং কখন জড়িত হবেন?

রাজনৈতিক কর্ম কাণ্ডের সাথে জড়িত হওয়া, একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততা। এটিকে আমরা অস্বীকার করছি না। তবে আমরা একই সময়ে কর্মের ধারাবাহিকতায় বিশ্বাসী। আমরা প্রথমে মানুষের আকীদা ঠিক করার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি, তারপর মানুষের ইবাদাত বন্দেগী ঠিক করার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি, তারপর মানুষের চাল-চলন ও লেন-দেন ঠিক করার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা যখন এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্ব দেব, তখন আমরা শরীয়ত সম্মত রাজনৈতিক কর্ম কাণ্ডে জড়িত হতে পারব। কারণ, রাজনীতির অর্থ হল, জনগণের কার্যক্রম পরিচালনা করা। আর এ কাজটি কে করবে? এটি কোন সাধারণ মানুষের কাজ নয়। যায়েদ, ওমর, বকর ও খালেদের কাজ নয় যে, তারা কোন একটি দল প্রতিষ্ঠা করবে, কোন আন্দোলনের বীজ বপন করবে অথবা কোন জামাতের নেতৃত্ব দেবে। বরং বিষয়টি যারা দেশ ও জাতির অভিবাবক তাদেরই কাজ, যাদের হাতে মুসলিমরা শপথ নেয় এবং তাদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে, তাদের কাজ। এ ব্যক্তিই জানে কীভাবে বাস্তবতার মোকাবেলা করতে হয় এবং জনসাধারণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। বর্তমান যুগের মত মুসলিমদের মধ্যে যদি ঐক্য না থাকে এবং তারা বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত থাকে, তখন প্রত্যেক ক্ষমতাশীলরা তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী পরিচালনা করবে।

আর আমরা যদি আমাদের নিজেদের এমন কাজে ব্যস্ত রাখি, যে কাজকে আমরা ধরে নিলাম তা আমরা ভালভাবে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার এ জানা আমার কোন উপকারে আসবে না। কারণ, আমরা তা পরিচালনা করতে ও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম নই। কারণ, আমরা জনগণের পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখি না। ফলে এটি একটি অনর্থক কাজ যার মধ্যে কোন উপকার নাই।

দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলব, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম দেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে, তার সমর্থনে জনমত সৃষ্টি করা ও মুসলিমদের উদ্ভুদ্ধ করাতে আদৌ কোন উপকার আছে? অথচ আমরা জিহাদ পরিচালনার ক্ষমতা রাখি না। কারণ, জিহাদ পরিচালনা হতে হবে, এমন একজন দায়িত্বশীল ইমামের নেতৃত্বে যার হাতে মুসলিমরা বাইয়াত নিয়েছে। অন্যথায় এতে কোন ফায়েদা নাই। তবে আমরা এ কথা বলি না যে, জিহাদ করা ওয়াজিব নয়! আমরা বলি, জিহাদ ওয়াজিব, কিন্তু তা তার সময় আসার পূর্বেই শুরু করা যাবে না। সুতরাং, আমাদের জন্য করনীয় হল, আমরা আমাদের নিজেদের ও অন্যদের বিশুদ্ধ ইসলাম সম্পর্কে বোঝানো ও তাদের সঠিক তারবীয়ত দেয়া। আর যদি আমরা মানুষকে স্পর্শ কাতর বিষয়সমূহে ব্যস্ত করে দেই, তাহলে তাদেরকে ঐ দাওয়াত সম্পর্কে জানা ও বুঝার ক্ষমতা থেকে দূরে সরানো হবে, যে দাওয়াতের দায়িত্ব আদায় করা প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর ওয়াজিব। যেমন, আকীদা শুদ্ধ করা, ইবাদাতসমূহ সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করা এবং আখলাক সুন্দর করা।
মনে রাখতে হবে, এ গুলো হল, ফরজে আইন-যাতে কোন প্রকার দূর্বলতা গ্রহণ করা হবে না। আর অন্যান্য বিষয়গুলো এমন, যেগুলোর কিছু আছে ফরজে কেফায়া, অর্থাৎ কতক লোক এ দায়িত্ব পালন করলে সবার পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে যাবে। যেমন, বর্তমানে ‌‍‍রাজনৈতিক কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকাকে ফিকহুল ওয়াকে’ বলে নাম করণ করা হয়ে থাকে। এর দায়িত্ব হল, যাদের মধ্যে সমসাময়িক সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা আছে তারা এ ধরনের কর্ম-কাণ্ড হতে ফায়েদা লাভ করতে সক্ষম। তবে কতক লোক আছে, যাদের হাতে সমাধানের কোন ক্ষমতা নাই তাদের জন্য রাজনৈতিক কর্ম কাণ্ড সম্পর্কে জানা, সাধারণ মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে ফিরিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত করা, এমন একটি কাজ যা তাদের সঠিক বুঝ হতে দূরে সরিয়ে রাখে। বর্তমানে এ ধরনের সমস্যা অধিকাংশ ইসলামী দল ও সংগঠনসমূহের কর্ম পদ্ধতির মধ্যে আমরা প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাই এবং সরাসরি অনুভব করি। এমনকি আমরা এ সব দাঈদের অনেককেই দেখতে পাই, বিশুদ্ধ আকীদা, ইবাদাত বন্দেগী ও আখলাক শেখার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ও তাদের আশ পাশে থাকা অনেক মুসলিম যুবককে তারা সঠিক আকীদা শিক্ষাদান হতে বিরত রাখে। অনেক দাঈদের অবস্থা এমন তাদের রাজনৈতিক কর্ম-কাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকা এবং আল্লাহ নাযিলকৃত বিধানের পরিপন্থী সংসদের সদস্য হওয়ার অভিলাষ তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে বিরত রাখে। ফলে তারা এমন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে যা বর্তমান এ নাজুক পরিস্থিতিতে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
বর্তমান করুণ পরিণতির পরিবর্তনের জন্য অংশ গ্রহণ করা অথবা মুসলিমদের দায়িত্ব হতে দায়মুক্তির প্রদ্ধতি সম্পর্কে যে প্রশ্ন করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা বলব, প্রতিটি মুসলিম তার যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্বশীল। তাদের মধ্যে যারা আলেম তাদের উপর যা ওয়াজিব হবে অন্যদের উপর তা ওয়াজিব নয়। যেমন, এসব বিষয়ে আমরা বলব, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর তার কিতাবের মাধ্যমে নিয়ামতসমূহ পূর্ণ করেন এবং কুরআনকে মুমীনদের জন্য সংবিধান হিসেবে নির্ধারণ করেন।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 
 فَسۡ‍َٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٧   [سورة الأنبياء: من الآية 7]   “তোমরা জ্ঞানীদের নিকট জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান” [ সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৭]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলামি সমাজকে দুটিভাগে বিভক্ত করে বলেন, এখানে দুই শ্রেণীর লোক আছে,
এক শ্রেণীর লোক যারা আলেম আর অপর শ্রেণীর লোক আছে যারা আলেম নয়। আর এ দুই শ্রেণীর লোকের দায়িত্ব এক নয়।
একজন আলেমের দায়িত্ব আর যে আলেম নয়, তার দায়িত্ব এক হতে পারে না। যারা আলেম নয় তাদের দায়িত্ব হল, জানার জন্য তারা আলেমদের নিকট জিজ্ঞাসা করবে, আর আলেমদের দায়িত্ব হল, তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে। মোট কথা ব্যক্তির ধরনের উপর নির্ভর করে, তাদের দায়িত্বও বিভিন্ন হয়ে থাকে। বর্তমান যুগে একজন আলেমের দায়িত্ব হল, সে তার ক্ষমতা অনুযায়ী মানুষকে সত্যের দিকে দাওয়াত দেবে। আর যে আলেম নয়, তার উচিত হল, তার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা অথবা যে দায়িত্বশীল তাকে তার স্ত্রী সন্তানরা তাদের অজানা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে। যখন উভয় শ্রেণীর লোক তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব আদায় করবে, তখন তারা নাজাত পাবে। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَا ﴾ [سورة البقرة: من الآية 286]. 
“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাহিরে দায়িত্ব দেন না।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬]
আমরা অত্যন্ত দু:খের সাথে বলছি বর্তমানে আমরা এমন এক দূরাবস্থার মধ্যে বসবাস করছি, ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তা হল, মুসলিমদের বিরুদ্ধে অমুসলিম কাফেরদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ হাদীসে এর ভবিষ্যৎ করে বলেন,

« تداعى عليكم الأمم كما تداعى الأكلة إلى قصعتها”، قالوا: أمن قلة نحن يومئذ يا رسول الله ؟ قال: “لا، أنتم يومئذ كثير، ولكنكم غثاء كغثاء السيل، ولينزعن الله الرهبة من صدور عدوكم لكم، وليقذفن في قلوبكم الوهن”، قالوا: وما الوهن يا رسول الله ؟ قال: “حب الدنيا وكراهية الموت»
“বিজাতিরা তোমাদের বিপক্ষে একে অপরকে ডাকাডাকি করবে, যেমনটি খাওয়ার দস্তরখানের দিকে একে অপরকে ডাকাডাকি করে, তারা জিজ্ঞাসা করল,  হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন কি আমাদের সংখ্যা কম হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম না, সেদিন তোমাদের সংখ্যা কম হবে না, বরং তোমাদের সংখ্যা সেদিন বেশি হবে, তবে তোমরা বন্যার পানিতে ভাসমান খড়-কুটার মত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদের দুশমনদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়কে ছিনিয়ে নিবে। আর তোমাদের অন্তরে ওহানকে ঢেলে দেবে। তারা জিজ্ঞাস করল, হে আল্লাহর রাসূল ওহান জিনিসটি কি? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়। [আবু দাউদ ৪২৯৭, আহমদ ২৭৮/৫ হাদিসিটি বিশুদ্ধ আবুদাউদ [৪২৯৭] ছাওবানের হাদিস হতে আর আল্লামা আলবানী উভয় সনদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]


মোট কথা, আলেমদের দায়িত্ব হল, তারা মানুষকে তালীম তরবীয়ত ও সংশোধন করতে চেষ্টা চালাবে। আর এর পদ্ধতি হল, আলেমরা তাদের সাধ্যানুযায়ী মানুষকে বিশুদ্ধ আকীদা, তাওহীদে খালেস, ইবাদাত ও আখলাক শিখাবে। বর্তমান সময়ে আমরা যে সমাজে বসবাস করি আমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিহাদ করার কোন ক্ষমতা আমাদের নাই। কারণ, বর্তমানে আমাদের মধ্যে কোন ঐক্য নাই, আমাদের কোন দেশ নাই যেখানে আমরা একত্র হতে পারি এবং আমাদের কোন ইমাম নাই যার পিছনে আমরা সারিবদ্ধ হতে পারি। কারণ, মুসলিমরা তাদের বিরেুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্রকারী দুশমনদের প্রতিহত করতে যে ধরনের জিহাদ করা দরকার সে ধরনের জিহাদ করতে তারা সক্ষম নয়। তবে তাদের জন্য করনীয় হল, দুশমনদের প্রতিহত করতে শরীয়ত সম্মত যত প্রকার উপায় ও উপকরণ আছে, সম্ভাব্য সব ধরনের উপায় ও উপকরণ অবলম্বন করবে। কারণ, বর্তমানে আমরা বস্তুগত দিক দিয়ে সামর্থ্যবান নই। আর যদি আমরা সামর্থ্যবান হয়েও থাকি, আমরা আমাদের ইচ্ছা মত কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না। কারণ, অধিকাংশ মুসলিম দেশে তাদের নিজস্ব প্রসাশন আছে, নেতৃত্ব আছে, বিচারক আছে যা ইসলামী শরিয়তের সাথে সামঞ্জস্যতা বা মিল রাখে না। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় হল, একটু পূর্বে আমরা যে দুটি বিষয় উল্লেখ করলাম, অর্থাৎ সংশোধন ও তালীম তারবীয়ত তা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। যখন মুসলিম দাঈরা যে দেশে ইসলামী শরিয়ত সম্মত বিধি বিধান নাই সে দেশে এ গুরুত্বপূর্ণ দুটি মিশন নিয়ে কাজ করে যাবে এবং এ দুটি মুলনীতির উপর একত্র হবে, আমার বিশ্বাস তাদের উপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাণীর পুরোপুরি প্রতিপলন দেখা যাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 
﴿ وَيَوۡمَئِذٖ يَفۡرَحُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٤ بِنَصۡرِ ٱللَّهِۚ يَنصُرُ مَن يَشَآءُۖ ﴾ [سورة الروم: من الآية 4-5].
“আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে, আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন।”


একজন মুসলিমের উপর ওয়াজিব হল, তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধ্যমত আল্লাহর বিধানের বাস্তবায়ন করা।

সুতরাং মনে রাখতে হবে, মুসলিমের উপর ওয়াজিব হল, তার সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করা। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাউকে তার ক্ষমতার বাহিরে কোন কিছু্র দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। এখানে বিশুদ্ধ আকীদা প্রতিষ্ঠিত করা আর বিশুদ্ধ ইবাদাত প্রতিষ্ঠার মধ্যে বাধ্যবাধকতা নাই। অনুরূপভাবে যেখানে আল্লাহর বিধান নাই সেখানে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা ও না করার মধ্যে কোন বাধ্যবাধকতা নাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্ব প্রথম আল্লাহর জমিনে যে বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে, তা হল, তাওহীদ। তবে এখানে বিশেষ কিছু কাজ বিভিন্ন সময় দেখা যায়, যেমন- একাকীত্ব অবলম্বন করা মানুষের সাথে সংমিশ্রণ হতে অতি উত্তম। একজন মুসলিম কোন নির্জন স্থানে গিয়ে দুনিয়ার সব মানুষ থেকে দূরে সরে একা হয়ে যাবে এবং সেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত বন্দেগী করবে। দুনিয়ার সব ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকবে, মানুষের অনিষ্টতা থেকে সে বেঁচে থাকল এবং তার অনিষ্টতা থেমে মানুষ বেঁচে থাকল। এ বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে, যদিও সত্যিকার দ্বীন হল, ইব্ন ওমর রা. হাদীসে যে কথা আসছে, তারই মর্মার্থ। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,  
« المؤمن الذي يخالط الناس ويصبر على أذاهم خير من المؤمن الذي لا يخالط الناس ولا يصبر على أذاهم »
যে মুমিন মানুষের সাথে উঠবস করে এবং তাদের নির্যাতনের উপর ধৈর্য্য ধারণ করে সে মুমিন উত্তম এমন মুমিন হতে যে মানুষের সাথে উঠবস করে না এবং তাদের কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করে না।
মোট কথা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করার মাধ্যম, তবে তা কোন উদ্দেশ্য নয়। কিছু দায়ীদের কর্ম দেখলে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না, তারা যা করতে পারবে না তার প্রতি খুব গুরুত্ব দেয়। কিন্তু তাদের জন্য যে কাজটি করা সহজ ও যা তাদের করণীয় তা তারা ছেড়ে দেয়। কারণ, এ সব কাজগুলো করতে হলে, তাদেরকে তাদের নফসের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। তাই তারা এ সব কাজ ছেড়ে দিয়ে, রাস্তায় নামে দ্বীন কায়েম করার জন্য। যেমন- একজন মুসলিম দায়ী সে তার অনুসারীদের ওসিয়ত করে বলেন, “তোমরা তোমাদের দেহে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম কর, তা হলে তা তোমাদের দেশেও কায়েম হয়ে যাবে”।

তারপরও আমরা দেখতে পাই, অধিকাংশ দায়ীরা এ মুলনীতির খেলাপ করে, তারা তাদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে একমাত্র বিধান দাতা বলে, আখ্যায়িত করে। তারা এ বিষয়টিকে প্রসিদ্ধ প্রবাদ একমাত্র বিধান দাতা আল্লাহ বলে, চালিয়ে দেন। এতে কোন স:ন্দেহ ও সংশয় নাই যে,  একমাত্র বিধান দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি একক, এ বিষয়ে এবং অন্য কোন বিষয়ে তার সাথে কোন শরিক নাই। আবার কিছু লোককে দেখা যায়, তারা চার মাযহাবের কোন মাযহাবকে অনুসরন করে,  তারা যখন তাদের সামনে স্পষ্ট ও বিশুদ্ধ সুন্নাতকে তুলে ধরা হয়, তখন তারা বলে, এটি আমার মাযহাবের পরিপন্থি। তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বিধান অনুযায়ী আমল করার দাবি কোথায়? আবার কতক লোককে দেখা যায়, তারা সুফীদের নিয়মে আল্লাহর ইবাদাত করে থাকে। আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের বিধান তাওহীদের উপর আমল করার বিষয়টি কোথায় গেল? তারা অন্যদের থেকে এমন কিছু চায়, যা তারা নিজেরা তাদের নিজেদের জন্য করে না। মনে রাখবে, সর্বাধিক সহজ বিষয় হল, তুমি আল্লাহর বিধানকে তোমার বিশ্বাস, ইবাদাত, চাল-চলন, তোমার ঘর, তোমার ছেলেদের লালন-পালন, তোমার ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদিতে বাস্তবায়ন করবে। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে চলতে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা ও তাদের আল্লাহর বিধানের উপর চলতে বাধ্য করা অনেক কঠিন ও দূরহ ব্যাপার। সুতরাং, তুমি কেন সহজটি ছেড়ে কঠিনটি নিয়ে হুড়াহুড়ি করবে?   

এতে দুটি জিনিস প্রমাণিত হয়, এক- ভূল শিক্ষা ও অপরিপক্ক নির্দেশনা। অথবা ভূল ধারণা যা তাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করে যা তার সামর্থ্যের মধ্যে নাই এবং তাকে এমন কাজ হতে ফিরিয়ে রাখে যা তার সাধ্যের মধ্যে আছে। বর্তমানে একমাত্র আত্মশুদ্ধি, তালীম তারবীয়ত ও মানুষকে সঠিক আক্বীদা এবং ইবাদাত বন্দেগীর প্রতি দাওয়াত দেয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছিনা। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষ তার যোগ্যতা ও সামর্থ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন মানুষকে তার সামর্থ্যের বাহিরে কোন দায়িত্ব দেন না।

No comments

Powered by Blogger.