মুসলিম মনীষী ইমাম বুখারি (র.)

'ইকরা'(আপনি পড়ুন) শব্দ দিয়ে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর নিকট ওহির সূচনা হলো। এজন্য ইসলামে জ্ঞান ও জ্ঞানীদের অনেক মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আর আল কুরআনকে বলা হয়েছে হাকিম (বিজ্ঞানময়)। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন , প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ। তাই শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে মহানবি হযরত মুহাম্মদ(স.) মক্কায় দারুল আরকাম নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মদিনায় হিজরতের পর মসজিদে নববির বারান্দায় ৭০ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ''সুফ্ফা'' নামে একটি শিক্ষায়তন গড়ে তোলেন। মক্কা বিজয়ের পর মসজিদে নববি জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্র-কাশ করে। সেখানে সুদূর পারস্য ,রোম ,কুফা ,বসরা , বাগদাদ ,সিরিয়া ,মিসর থেকে শিক্ষার্থীরা এসে জ্ঞানের জন্য ভিড় জমাত।
'''''' '''''' '''''' ''''' ''''' ''''' 



ইমাম বুখারি (র.)নাম মুহাম্মদ ,উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, পিতার নাম ইসমাঈল ,দাদার নাম ইব্রহিম। উপাধি ''আমিরুল মু'মিনুন ফিল হাদিস'' হাদিস বর্ণনায় মু'মিন-দের নেতা। তিনি ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির লালন কেন্দ্র বুখারা ''বর্তমান রাশিয়াই'' ১৯৪ হিজরি , ১৩-ই শাওয়াল , ৮১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই ,শুক্রবার জন্ম-গ্রহন করেন। বাল্যকালেই তাঁর পিতা ইন্তিকাল করেন। মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসায় তিনি বড় হন। বাল্যকাল থেকে জ্ঞানের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আগ্রহ। তিনি খুব তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী ছিলেন।
'''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''
ছয় বছর বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন হিফজ ''মুখস্ত'' করে ফেলেন। দশ বছর বয়স থেকেই হাদিস মুখস্থ করা আরম্ভ করেন। ষোল বছর বয়সেই তিনি হযরত আব্দু-ল্লাহ ইবনে মুবারক ও আল্লামা ওয়াকি-এর লেখা হাদিস গ্রন্থদয় মুখস্থ করেন। অতঃপর তিনি তাঁর মা ও ভাইসহ হজ্ব করতে পবিত্র মক্কা নগরিতে গমন করেন। সেখানে তিনি হিজাযের মুহাদ্দিসগণের কাছ থেকে হাদিস শাস্ত্র শিক্ষা লাভ করেন। একাধারে ছয় বছর হাদিস বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার পর তিনি হাদিস সংগ্রহ করার জন্য কুফা ,বাগদাদ ,বসরা ,মিসর ,সিরিয়া ,আসকালান , হিমস ,দামিশক ইত্যাদি স্থানে গমন করেন। তিনি লক্ষা-ধিক হাদিস সনদসহ মুখস্থ করেন। তিনি স্বাধীনচেতা ও আত্নসন্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন,বিধায় কোন রাজা বাদশার দরবারে গমনাগমন করতেন না।
''''''' ''''''' ''''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' ''''''
ইমাম বুখারি দীর্ঘ ষোল বছর সাধনা করে ৬ লক্ষ হাদিস থেকে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে ৭২৭৫ টি হাদিস বুখারি শরিফে লিপিবদ্ধ করেন। প্রত্যেক হাদিস লেখার পূর্বে তিনি ওযু ও গোসল করে দুই রাকআত নফল নামায পড়তেন। অতঃপর ''ইস্তেখারা'' স্বপ্নে কল্যাণকর বস্তু পাওয়ার আবেদন করতেন।।।। বিশুদ্ধ মনে হলে সেই হাদিস লিখতেন। হাদাসবিশারদ ও উলামায়ে কেরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন ,পৃথিবীতে আল-কুরআনের পর বুখারি শরিফই হলো সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ। এটি ছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আরও অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। জ্ঞান সাধনায় ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করলে যে স্মরণীয় ও বরণীয় হওয়া যায় ইমাম বুখারি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।।
'''''' '''''' '''''' '''''' ''''''
ইমাম বুখারি দীর্ঘ সাধনা শেষে বুখারায় এলে তৎকালী-ন বাদশাহ খলিল ইবনে আহমদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়।।।।। বাদশাহ ইমাম বুখারির ইলমে হাদিসের গভীর জ্ঞানের কথা শুনে তাঁর কাছ থেকে হাদিস শোনার জন্য তাঁকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠালেন।।।।।। ইমাম বুখারি বললেন ,আমি হাদিস কে রাজ দরবারে নিয়ে অপমান করতে চাই না। তার প্রয়োজন হলে সে আমার ঘরে বা মসজিদে আসুক।অতঃপর বাদশাহ তাঁকে বুখারা ত্যাগে বাধ্য করলে তিনি সমরকন্দে চলে যান।
'''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' '''''' ''''''
ইমাম বুখারি ছিলেন অগাধ স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তিনি যা দেখতেন বা শুনতেন তা তাঁর মনে থাকত। তাঁর বয়স যখন এগার তখন ''দাখেলি'' নামক এক মুহাদ্দিস তাঁর সামনে হাদিস বর্ণনায় ভুল করলে তিনি তা শুদ্ধ করে দেন। উপস্থিত সবাই ইমাম বুখারির মেধা দেখে আশ্চর্যান্বিত হলেন। সমরকন্দের প্রসিদ্ধ চারশত হাদিসবিশারদ তাঁর হাদিস মুখস্থের পরীক্ষা নেন। তিনি তাতে অত্যান্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হলে সবাই তাঁকে সে যামানার শ্রেষ্ঠ হাদিসবিসারদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বর্ণীত আছে যে ,তাঁর ৯০ হাজারের উপরে ছাত্র ছিলো যারা তাঁর কাছে হাদিস শিখেছেন। আমাদের মাঝে ও যারা জ্ঞানর্জন ও জ্ঞান বিতরণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায় ,ইমাম বুখারি তাদের জন্য এক দীপ্ত অনুসরণীয় আদর্শ।
'''' '''' '''' '''' আমিন..........
বিঃদ্রঃ-ছবিটা কাল্পনিক।।

No comments

Powered by Blogger.