প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবাদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। রাসূল (সাঃ) এর জীবনী। ১১তম খন্ড
সেই নিদারুণ দুঃসময়েও মুসলমানরা কিভাবে অটল অবিচল থাকতে সক্ষম হলেন ? একথা ভেবে শক্ত মনের মানুষও অবাক হয়ে যান কি নির্মম নির্যাতনের মুখে মুসলমানরা ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছিলেন অত্যাচার নির্যাতনের বিবরণ পাঠ করে দেহ মন শিউরে ওঠে, কি সেই সম্মোহনী শক্তি, যার কারণে মুসলমানরা এতটা অবিচলিত ছিলেন? এ সম্পর্কে নীচে সংক্ষেপে আলোকপাত করা যাচ্ছে।
এক. ঈমানের সৌন্দর্য
সর্ব প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে আল্লাহর ওপর ঈমান এবং তার সঠিক পরিচয় জানা ঈমানের সৌন্দর্য ও মাধুর্য পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেয়েও অটল থাকে যার ঈমান এ ধরনের মজবুত এবং শক্তিশালী, তিনি যে কোন অত্যাচার নির্যাতনকে সমুদ্রের ওপরে ভাসমান ফেনার চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেন না এ কারনেই মোমেন বান্দা ঈমানের মিষ্টতা এবং মাধুর্যের সামনে কোন বিপদ বাধাকেই পরোয়া করেন না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে থেকে যায় (১৭, ১৩)।
দুই. আকর্ষণীয় নেতৃত্ব
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উম্মতে ইসলামিয়া বরং সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা, তার শারীরিক সৌন্দর্য মানসিক পূর্ণতা প্রশংসনীয় চরিত্র চমৎকার ব্যক্তিত্ব পরিশীলিত অভ্যাস ও কর্মতৎপরতা দেখে আপনা থেকেই তাকে ভালবাসার ইচ্ছা জাগতো, তার জন্যে মন উজাড় করে দিতে ইচ্ছা হত, মানুষ যেমন গুণ বৈশিষ্ট্য মনে প্রাণে পছন্দ করে, সেসব তার মধ্যে এত বেশী ছিল যে, এতোগুলো গুণ বৈশিষ্ট্য একত্রে অন্য কাউকেই দেয়া হয়নি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্ব আভিজাত্য ও চারিত্রিক সৌন্দর্যে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন, ক্ষমাশীলতা আমানতদারী সততা সত্যবাদিতা সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুণ এত বেশি ছিল যে, তার স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে শত্রুরাও কখনো সন্দেহ পোষণ করেনি, তিনি যে কথা মুখে একবার উচ্চারণ করতেন তার শত্রুরাও জানতো যে, সে কথা সত্য এবং তা বাস্তবায়িত হবেই হবে বিভিন্ন ঘটনা থেকে একথার প্রমাণও পাওয়া যায়।
একবার কোরাইশদের তিনজন লোক একত্রিত হয়েছিল, তারা প্রত্যেকেই গোপনে কোরআন তেলাওয়াত শুনেছিল, কিন্তু কারো কাছে তারা সে কথা প্রকাশ করেনি, এদের মধ্যে আবু জেহেলেও ছিল একজন অন্য দুজনের একজন আবু জেহেলকে জিজ্ঞাসা করলো যে মোহাম্মাদের কাছে যা কিছু শুনেছো বলতো সে সম্পর্কে তোমার মতামত কি? আবু জেহেল বলল, আমি কি শুনেছি? আসলে কথা হচ্ছে যে, আমরা এবং বনু আবদে মান্নাফ আভিজাত্য ও মর্যাদার ব্যাপারে একে অন্যের সাথে মোকাবেলা করতাম তারা গরীবদের পানাহার করালে আমরাও তা করতাম, তারা দান খয়রাত করলে আমরাও করতাম, ওরা এবং আমরা ছিলাম পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী আমরা ছিলাম রেসের ঘোড়ার দুই প্রতিযোগীর মত, এমনি অবস্থায় আবদে মান্নাফ বলতে শুরু করল যে, আমাদের মধ্যে একজন নবী আছেন, তার কাছে আকাশ থেকে ওহী আসে বলতো আমরা কিভাবে ওরকম ওহী পেতে পারি? খোদার কসম, আমি ঐ ব্যক্তির ওপর কখনো বিশ্বাস স্থাপন করবো না, এবং কখনো তাকে সত্যবাদী বলে স্বীকৃতি দেব না (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃ. ২১৬)।
ইতিপূর্বে এ ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে যে, পৌত্তলিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একদিন গালাগাল করছিল, পরপর তিনবার এরূপ করল, তৃতীয়বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থমকে দাড়িয়ে বললেন, হে কোরাইশদের আমি তোমাদের কাছে জবাইর পশু নিয়ে এসেছি, একথা শোনার সাথে সাথে কাফেররা আল্লাহর রাসূলকে ভালো ভালো কথা বলে খুশী করার চেষ্টা করতে লাগলো, ইতিপূর্বে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদা দেয়ার সময় কয়েকজন কাফের তার ঘাড়ের ওপর উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দিয়েছিল, নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের কাজ যারা করেছে তাদেরকে বদ দোয়া দিলেন, সেই বদ দোয়া শুনে কাফেরদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল, তারা গভীর চিন্তায় পড়ে গেল, কেননা তারা নিশ্চিতভাবে জানতো যে, এবার আর তারা রেহাই পাবে না।
এ ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু লাহাবের পুত্র ওতাইবাকে বদদোয়া করার পর সে বুঝেছিল যে, এর পরিণাম থেকে সে রক্ষা পাবে না, সিরিয়া সফরের সময় বাঘ দেখেই সে বলেছিল আল্লাহর কসম মোহাম্মাদ মক্কায় থেকেই আমাকে হত্যা করেছেন।
উবাইন ইবনে খালফের ঘটনায় রয়েছে , এই লোকটি বারবার যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করার হুমকি দিত, এ ধরনের হুমকির জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার বলেছিলেন, তুমি নও বরং আমিই তোমাকে হত্যা করব ইনশাআল্লাহ, এরপর ওহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য একজন সাহাবীর হাত থেকে একটি বর্শা নিয়ে উবাইয়ের প্রতি নিক্ষেপ করেন এতে তার ঘাড়ের কাছে সামান্য জখম হয়েছিল পরে উবাই বারবার বলছিল মোহাম্মাদ মক্কায়ই বলেছিলেন আমি তোমাকে হত্যা করব, তিনি যদি আমাকে থুথুও নিক্ষেপ করতেন তবুও আমার প্রাণ বেরিয়ে যেত (ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, পৃ. ৮৪) এর বিস্তারিত বিবরণ পরে উল্লেখ করা হবে।
একবার হযরত সাদ ইবনে মায়ায মক্কায় উমাইয়া ইবনে খালফকে বলেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, মুসলমানরা তোমাকে হত্যা করবে একথা শুনে উমাইয়া ভীষণ ভয় পেয়ে গেল এ ভয় সব সময়েই তার ছিল, সে প্রতিজ্ঞা করছিল যে মক্কার বাইরে কখনো যাবে না, বদরের যুদ্ধের সময় আবু জেহেলের পীড়াপীড়িতে উমাইয়া যুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সবচেয়ে দ্রুতগামী উট ক্রয় করল, যাতে বিপদের আশঙ্কায় সময় দ্রুত পালিয়ে আসতে পারে, যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার সময় তার স্ত্রী তাকে বলেছিল আবু সফওয়ান আপনার ইয়াসরেবী ভাই যে কথা বলেছেন আপনি কি সে কথা ভুলে গেছেন? উমাইয়া বলল, না ভুলিনি আমি তো ওদের সাথে অল্প কিছু দূরে যাব (সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃ. ৫৬৩)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শত্রুদের অবস্থা ছিল এরকম তার সঙ্গী এবং সাহাবাদের অবস্থা তো এমন ছিল যে, তারা মনে প্রাণে প্রিয় নবীর প্রতি নিবেদিত ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সাহাবাদের ভালবাসা এতো তীব্র ছিল যেন তা পাহাড়ি ঝর্ণার পানির ধারা, লোহা যেমন চুম্বকের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সাহাবারাও তেমনি আল্লাহর রাসূল (সা.) এর প্রতি আকৃষ্ট হতেন।
কবি বলেন, তার চেহারা সব মানব দেহের জন্য অস্তিত্ব স্বরূপ তার অস্তিত্ব ছিল প্রতিটি অন্তরের জন্য চুম্বকের মত।
এ ধরনের ভালবাসা এবং নিবেদিত চিত্ততার কারণেই সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসূলের ওপর কারো আঁচড় এবং তার পায়ে কাটা বিদ্ধ হওয়াও সহ্য করতে পারতেন না এর বিনিময়ে তারা নিজেদের মাথা কাটিয়ে দিতেও প্রস্তুত থাকতেন।
দুর্বৃত্ত ওতবা ইবনে রবিয়া একদা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) কে মারাত্মকভাবে প্রহার করলো, তাঁর চেহারা রক্তাক্ত করে দেওয়া হলো, তীব্র প্রহারের এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন, খবর পেয়ে তাঁর গোত্র বনু তাইমের লোকেরা তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিল, তাঁর বাঁচার আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছিলো, দিনের শেষে তাঁর জ্ঞান ফিরে এলো, তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন? একথা শুনে বনু তাইম গোত্রের যারা সেখানে উপস্থিত ছিলো, তারা বিরক্তি প্রকাশ করলো, তারা উঠে যাওয়ার সময় হযরত আবু বকরের মাকে বললো, ওকে কিছু খাওয়াতে পারেন কিনা দেখুন, আবু বকর (রা.) তাঁর মা উম্মুল খায়েরের কাছে আল্লাহর রসূলের খবর জানতে চাইলেন, তিনি বললেন আমি তো জানি না বাবা, হযরত আবু বকর (রা.) বললেন মা আপনি উম্মে জামিল বিনতে খাত্তাবের কাছে যান, তাঁর কাছ থেকে আমাকে আল্লাহর রসূলের খবর এনে দিন, উম্মুল খয়ের উম্মে জামিলের কাছে গেলেন, তাঁকে বললেন, আবু বকর তোমার কাছে মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ সম্পর্কে জানতে চাইছেন, উম্মে জামিল বললেন, আমি আবু বকরকে জানিনা, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকে জানিনা, তবে আপনি যদি চান, তাহলে আমি বকরের কাছে যেতে পারি, উম্মুল খায়ের উম্মে জামিলকে তাঁর পুত্রের কাছে নিয়ে এলেন, হযরত আবু বকরের অবস্থা দেখে উম্মে জামিল চিৎকার দিয়ে উঠলেন, বললেন যে কওমের লোকেরা আপনার এ দুরবস্থা করেছে, নিঃসন্দেহে তারা দুর্বৃত্ত ও কাফের, আমি আশা করি, আল্লাহ তায়ালা আপনার পক্ষে ওদের উপর প্রতিশোধ নেবেন, হযরত আবু বকর (রা.) আল্লাহর রসূলের খবর জানতে চাইলেন, উম্মে জামিল উম্মুল খায়েরের প্রতি ইশারা করলেন, হযরত আবু বকর (রা.) বললেন অসুবিধা নেই, উম্মে জামিল বললেন তিনি ভালো আছেন, এবং ইবনে আকরামের ঘরে আছেন, হযরত আবু বকর (রা.) বললেন আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমাকে আল্লাহর রসূলের কাছে না নেওয়া পর্যন্ত আমি কোন কিছুই পানাহার করবো না, উম্মুল খায়ের ও উম্মে জামিল অপেক্ষা করতে লাগলেন, সন্ধ্যার পর লোক চলাচল কমে গেলে এবং অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর মা উম্মুল খায়ের এবং উম্মে জামিলের কাঁধে ভর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাযির হলেন (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৩য় খন্ড, পৃ.৩০)।
ভালোবাসা এবং নিবেদিত চিত্ততার আরো কিছু বিস্ময়কর ঘটনা এবং বইয়ের বিভিন্ন স্থান বিশেষত ওহুদের যুদ্ধের ঘটনায় এবং হযরত যোবায়র (রা.) ঘটনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন. দায়িত্ব সচেতনতা
সাহাবায়ে কেরাম ভালোভাবে জানতেন যে, মাটির মানুষের উপর যেসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব যত কঠিন হোক না কেন উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই, কেননা সে দায়িত্ব উপেক্ষার পরিণাম হবে আরো ভয়াবহ, এতে সমগ্র মানব জাতির ক্ষতির সম্মুখীন হবে, সেই ক্ষতির তুলনায় এ জুলুম অত্যাচার বিপদ মুসিবতের কোন গুরুত্ব নেই।
চার. পরকালের উপর বিশ্বাস
আখিরাত বা পরকালের জীবনের উপর বিশ্বাস উল্লেখিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁদের কঠোর সংযমী ও সহিষ্ণু হতে অনুপ্রাণিত করেছে সাহাবায়ে কেরাম এ ব্যাপারে সুদৃঢ় ও অবিচল আস্তা পোষণ করতেন যে, তাদেরকে একদিন রাব্বুল আলামিন আল্লাহর দরবারে দাড়াতে হবে সেখানে জীবনের ছোট বড় সকল কাজের হিসাব দিতে হবে এরপর হয়তো নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত অথবা ভয়াবহ শাস্তিভরা জাহান্নামে প্রবেশ করান হবে, এ বিশ্বাসের বলে সাহাবায়ে কেরাম আশা ও আশঙ্কায় পরিপূর্ণ জীবন যাপন করতেন, প্রিয় প্রভু আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করতেন এবং তার আযাবকে ভয় করতেন তাদের অবস্থার কথা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এভাবে উল্লেখ করেন তারা যা কিছু সম্পাদন করে সেটা করে অন্তরে ভয়ভীতির সঙ্গে একারণে করে যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে।
তারা একথাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, এ পৃথিবীর সকল আরাম আয়েশ সুখ স্বাচ্ছন্দ এবং দুঃখ কষ্ট পরকালের তুলনায় একটি মশার একটি পাখার সমান মূল্যও রাখে না এ বিশ্বাস তাদের এতো অবিচল এবং অটুট ছিলো যে, এর মোকাবেলায় দুনিয়ার সব বিপদ আপদ তিক্ততা দুঃখ কষ্ট ছিল তুচ্ছ।
পাঁচ. কঠিন থেকে কঠিনতর সে অবস্থা
কোরআনের যেসব আয়াত পর্যায়ক্রমে নাযিল হচ্ছিল, তাতে ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা ও আদর্শ আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হচ্ছিল, কোরআনের সেসব আয়াতে মানব জাতির সামনে সবচেয়ে সম্মানজনক ও বৈশিষ্টমন্ডিত ইসলামী সমাজের ঈমানের সজীবতা এবং দৃঢ়তাকে আরো শক্তিমান করে তোলা হচ্ছিল, আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন উদাহরণ পেশ করছিলেন এবং হেকমত বা কৌশল মুসলমানদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে যদিও এখনো তোমাদের কাছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা আসেনি এবং তারা ভীত ও কম্পিত হচ্ছিল, এমনকি রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? হা আল্লাহর সাহায্য কাছেই (২১৪, ২)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আলিফ লাম মীম মানুষ কি মনে করে আমরা ঈমান এনেছি একথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী (১-৩, ২৯)।
পাশাপাশি এমন সব আয়াত নাযিল হচ্ছিল সেসব আয়াতে কাফের মুশরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হচ্ছিল, তাদের কোন অজুহাতেই ধোপে টেকার মত ছিল না, সুস্পষ্ট ভাষায় তাদের বলে দেয়া হয়েছিল যে, যদি তারা তাদের পথভ্রষ্টতা এবং হঠকারিতার ওপর অটল থাকে তবে পরিণাম হবে মারাত্মক, উহাদরহণ হিসাবে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের এমন সব ঘটনা এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে যে, ওতে আল্লাহর রাসূল এবং কাফেরদের সম্পর্কে আল্লাহর নীতি ব্যক্ত করা হয়েছে একই সাথে দয়া ও ক্ষমার কথাও বলা হয়েছে এবং পথনির্দেশ ব্যক্ত করা হয়েছে এসব বলা হয়েছে এ জন্যে যে, অবিশ্বাসীরা যেন নিজেদের পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহি থেকে বিরত থাকে।
প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কোরআন মুসলমানদের এক ভিন্ন পৃথিবী ভ্রমণ করিয়ে এনেছে তাদের সামনে বিস্ময়কর সব উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে যাতে তারা হতোদ্যম হয়ে না পড়ে কোন বাধা বা প্রতিকূলতাই যেন তাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখতে না পারে।
এ সকল আয়াতে মুসলমানদের এমন সব কথাও বলা হয়েছে যার দ্বারা মুসলমানরা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতের সুসংবাদ পেতে পারে আর অবিশ্বাসীদের চিত্র এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যাতে তারা আল্লাহর দরবারে ফয়সালার জন্য হাজির করার কথা জানতে পারে তাদের পার্থিব জীবনের পুণ্যের কোন স্থান পাবে না বরং তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে এবং বলা হবে, এবার দোযখের স্বাদ গ্রহন কর চিরদিন ধরে।
ছয়. কঠোর ধৈর্য
এসব কথা ছাড়াও মুসলমানরা অত্যাচারিত হওয়ার কেবল শুরু থেকেই নয়, বরং তার আগে থেকেই এটা জানতো, যে ইসলাম গ্রহণের অর্থ এই নয়ে যে, চিরস্থায়ীভাবে দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হবে বরং ইসলামের দাওয়াতের মূল কথাই ছিল জাহেলী যুগের অবসান সকল প্রকার অত্যাচার ও নির্যাতন নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার মূলোৎপাটন ইসলামের দাওয়াতের একটা লক্ষ্য এটাও ছিল যে, মুসলমানরা পৃথিবীতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করবে এবং রাজণৈতিকভাবে এমন বিজয় অর্জন করবে, যাতে সকল মানুষকে আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করা যায় মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে প্রবেশ করানো যায়।
কোরআনে করীমের এসব সুসংবাদ কখনো ইশারা এবং কখনো খোলাখুলিভাবে নাযিল হচ্ছিল, একদিকে অবস্থান এমন ছিল যে, প্রশস্ত হওয়া সত্বেও পৃথিবী মুসলমানদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল, তাদের টিকে থাকাই ছিল কঠিন তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করতে একদল লোক ছিল সদা সক্রিয়, অন্যদিকে মুসলমানদের শক্তি সাহস ও মনোবল বাড়াতে এমন সব আয়াত নাযিল হচ্ছিলো যাতে পূর্বকালের ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে, পূর্ববর্তী সময়ে নবীদের অবিশ্বাস করা হয়েছে এবং তাদের ওপরও অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে সেসব আয়াতে যে চিত্র অঙ্কন করা হচ্ছিল তার সঙ্গে মক্কার মুসলমানে ও কাফেরদের অবস্থার হুবহু সাদৃশ্য ছিল, পরিশেষে একথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইতিপূর্বে অবিশ্বাসীরা কিভাবে ধ্বংস এবং আল্লাহর পুণ্যশীল বান্দাদের তার জমিনের উত্তরাধিকারী করা হয়েছ পরিণামে মক্কার অবিশ্বাসীরাই ব্যর্থ ও পরাজিত ও মুসলমান এবং ইসলামের দাওয়াতের সাফল্যই অর্জিত হবে সেই সময়য়ে এমন সব আয়াতও নাযিল হয়েছে যেসব আয়াতে ঈমানদারদের বিজয়ের সুসংবাদ স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনী হবে বিজয়ী, অতএব কিছুকালের জন্য তুমি ওদেরকে উপেক্ষা কর তুমি ওদের পর্যবেক্ষণ কর, শীঘ্রই ওরা প্রত্যক্ষ করবে।
ওরা কি আমার শাস্তি ত্বরান্বিত করতে চায়? তাদের আঙ্গিণায় যখন শাস্তি নেমে আসবে তখন সতর্কীকৃতদের প্রতিফল ভয়াবহ ও জঘন্য হবে (১৭১, ১৭৭, ৩৭)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, এই দলতো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (৪৫, ৫৪)।
বহু দলের এই বাহিনীও সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে (১১, ৩৮)।
হাবশায় হিজরতকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যেই দুনিয়ায় তাদের উত্তম আবাস দেব এবং আখিরাতের পুরস্কারই তো শ্রেষ্ঠ, হায় ওরা যদি সেটা জানতো (৪২.১৬)।
অবিশ্বাসীরা আল্লাহর রাসূলকে হযরত ইউসুফ (আ.) এর ঘটনা জিজ্ঞাসা করার পর আল্লাহ তায়ালা বলেন, জিজ্ঞাসুদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে (৭, ১২) অর্থাৎ মক্কাবাসীরা আজ হযরত ইউসূফ (আ.) এর ঘটনা জিজ্ঞাসা করছে এবং ঠিক সে রকই ব্যর্থ হবে, যেমন ব্যর্থ হয়েছিল হযরত ইউসুফের ভাইয়েরা এদের পরিণাম হবে হযরত ইউসুফের ভাইয়ের পরিণামের মতই, কাজেই হযরত ইউসূফ এবং তার ভাইদের ঘটনা থেকে মক্কাবাসীদের শিক্ষা গ্রহন করা উচিত তাদের বোঝা উচিত যে, অত্যাচারীদের পরিণাম কি ধরনের হয়ে থাকে, এক জায়গায় পয়গাম্বরদের প্রসঙ্গ আলোচনা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন কাফেররা তাদের রাসূলদের বলেছিল, আমরা তো তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্যই বহিষ্কার করব, অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতেই হবে অতঃপর রাসূলদের প্রতি তাদের প্রতিপালক ওহী প্রেরণ করলেন, জালেমদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব (১৩-১৪, ১৪)।
পারস্য এবং রোমে যখন যুদ্ধের দাবানল জ্বলছিল কাফেররা চাচ্ছিল পারস্যবাসী যেন জয়লাভ করে, মুসলমানরা চাচ্ছিল রোমকরা যেন জয়লাভ করে কেননা রোমকরা আল্লাহ তায়ালা, পয়গাম্বর, ওহী আসমানী কেতাবে বিশ্বাসী বলে দাবী করতো, পারস্যবাসীরা জয়যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে আল্লাহ এ সুসংবাদ প্রদান করেন যে, কয়েক বছর পর রোমকরা জয়লাভ করবে শুধু এ সুসংবাদই দেয়া হয়নি, বরং আল্লাহ তায়ালা এ সুসংবাদও দিয়েছিলেন যে, রোমকদের বিজয়ের সময় আল্লাহ তায়ালা মোমেনদেরও বিশেষভাবে সাহায্য করবেন এই সাহায্য পেয়ে তারা খুশি হবে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর সেদিন মোমেনরা হর্ষে উৎফুল্ল হবে আল্লাহর সাহায্যে (৪৫, ৩০) পরবর্তী সময়ে বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় ও সাফল্যের দ্বারা আল্লাহর বাণীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছিল।
কোরআনের ঘোষণা ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদেরকে এ ধরনের সুসংবাদ শোনাতেন হজ্জের সময় ওকায, মাযনা, এবং যুলমাজাযের বাজারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের কাছে তার নবুয়তের কথা প্রচার করতেন, হে লোক সকল, তোমরা বল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, এতে তোমরা সফলকাম হবে এর বদৌলতে তোমরা হবে আরবের বাদশাহ এবং অন্যরাও তোমাদের পদানত হবে আর মরণের পরও তোমরা জান্নাতের ভেতর বাদশাহ হয়ে থাকবে (জামে তিরমিযি)।
ইতিপূর্বে এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওতবা ইবনে রবিয়া যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং ঐশ্বর্যের লোভ দেখাচ্ছিল এবং জবাবে তিনি হা-মীম সেজদা সূরার কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শুনিয়েছিলেন তখন ওতবা ভবিষ্যৎবাণী করেছিল যে, শেষ পর্যন্ত মুসলমানরাই জয় লাভ করবে।
আবু তালেবের কাছে কোরাইশদের সর্বশেষ প্রতিনিধিদল দেখা করতে এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে জবাব দিয়েছিলেন ইতিপূর্বে সেই জবাব উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেও পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তোমরা আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাস স্থাপন কর, এর ফলে সমগ্র আরব তোমাদের অধীনস্থ হবে এবং অনারবের ওপরও তোমাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
হযরত খাব্বাব ইবনে আরত (রা.) বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির হলাম তিনি কাবাঘরের ছায়ায় একটি চাদরকে বালিশ বানিয়ে শায়িত ছিলেন সে সময় আমরা পৌত্তলিকদের হাতে অত্যাচারিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছিলাম, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই পারেন এ কথা শুনে তিনি উঠে বসলেন তার চেহারা রক্তিম হয়ে উঠল, তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী সময়ে ঈমানদারদের অবস্থা এমনও হয়েছিল যে, লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের গোশত খুলে নেয়া হত, দেহে থাকত শুধু হাড়, এরূপ অত্যাচারও তাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের ওপর বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নিতে পারেনি, এরপর বললেন, আল্লাহ তায়ালা দ্বীনকে পূর্ণতা প্রদান করবেন একজন ঘোড় সওয়ার সানয়া থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত সফর করবে, এ সময়ে আল্লাহর ভয় ছাড়া তার অন্য কোন ভয় থাকবে না তবে হ্যাঁ বকরিদের ওপর বাঘের ভয় তখনো থাকবে (সহীহ বোখারী ১ম খন্ড, পৃ. ৫৪৩)।
একটি বর্ণনায় একথাও উল্লেখ রয়েছে যে, কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ (সহীহ বোখারী ১ম খন্ড, পৃ. ৫১)।
স্মরণ রাখা দরকার যে, এসব সুসংবাদ কোন গোপনীয় বিষয় ছিল না, এসব কথা ছিল সর্বজনবিদিত, মুসলমানদের মতই কাফের অবিশ্বাসীরাও এসব কথা জানত, আসওয়াদ ইবনে মোত্তালেব এবং তার বন্ধুরা সাহাবায়ে কেরামকে দেখলেই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করত তোমাদের কাছে সারা দুনিয়ার বাদশাহ এসে পড়েছে ওরা খুব শীঘ্রই কেসরা কায়সারকে পরাজিত করবে এসব কথা বলে তারা শিশ মারতো এবং হাততালি দিত (ফেকহুস সীরাত পৃ. ৮২)।
মোটকথা সাহাবায়ে কেরামের ওপর সে সময় যেসব যুলুম অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হত, সেসব কিছু বেহেশত পাওয়ার নিশ্চিত বিশ্বাস এবং সুসংবাদের মোকাবেলায় ছিল তুচ্ছ, এসব অত্যাচারকে সাহাবায়ে কেরাম মনে করতেন এক খন্ড মেঘের মত, যে মেঘ বাতাসের এক ঝাপটায় দূর হয়ে যাবে।
এছাড়া ঈমানদারদের ঈমানের পরিপক্কতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দিয়ে নিয়মিতভাবে সাহাবিরা রূহানী খাবার সরবরাহ করতেন কোরআন শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে তাদের মানসিক পরিশুদ্ধতা ব্যবস্থা করতেন ইসলাম সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ রূহানী শক্তির ব্যবস্থা মানসিক পরিচ্ছন্নতা চারিত্রিক সৌন্দর্যের শিক্ষা সাহাবাদের মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের ঈমানের নিভু নিভু স্ফুলিঙ্গকে উজ্জ্বল শিখায় পরিণত করতেন অন্ধকার থেকে বের করে তাদেরকে হেদায়েতের আলোকে পৌঁছে দিতেন এর ফলে সাহাবাদের দ্বীনি শিক্ষা ও বিশ্বাস বহুগুণ উন্নত হয়ে গিয়েছিল, প্রবৃত্তির দাসত্ব ছেড়ে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথে অগ্রসর হতেন, জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার আগ্রহ, জ্ঞান লাভের আকাঙ্খা এবং আত্ম সমালোচনায় তারা উদ্যোগী হয়েছিলেন এসব কারণে বিধর্মী পৌত্তলিকদের অত্যাচার নির্যাতন তাদেরকে লক্ষ্য পথ থেকে দূরে সরাতে পারেনি, ধৈর্য সহিষ্ণুতায় তারা ছিলেন অটল অবিচল, বিশ্ব মানবের জন্য তারা প্রত্যেকেই হয়ে উঠেছিলেন এক একজন উজ্জ্বল আদর্শ।
সূত্রঃ- আর-রাহিকুল মাখতুম
১৩ তম খন্ড
সূত্রঃ- আর-রাহিকুল মাখতুম
১৩ তম খন্ড
No comments