সালাত : এক মহা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
সালাতেরঅর্থ:
আরবি সালাত শব্দটি ‘সেলা’ ধাতুমূল থেকে উদ্গত- যার অর্থ বন্ধন। সালাতের
মাধ্যমে যেহেতু বান্দা ও তার রবের মাঝে বন্ধন সৃষ্টি হয় তাই এর নাম দেয়া
হয়েছে সালাত। আর ইসলামি পরিভাষায় সালাত হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম প্রদর্শিত ইবাদতের সেই নির্দিষ্ট পদ্ধতি- যা তিনি মুসলমানদের
হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। এককথায় সালাত নিয়ত সহযোগে বিশেষ কিছু শর্ত
সমন্বিত নির্দিষ্ট কথা ও কাজের নাম- যা তাকবিরের মাধ্যমে সূচিত হয়ে
সালামের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়
সালাতেরগুরুত্ব:
ইসলাম আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম। এ ধর্মের দ্বিতীয় ভিত্তিমূল সালাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পাঁচটি ভিত্তির ওপর ইসলামের বুনিয়াদ।’ (বুখারি ও মুসলিম)এ পাঁচটির মধ্যে দ্বিতীয়টি হল সালাত।সালাত মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা সালাত কায়েম করে।’ (বাকারা : ০৩)যে
ব্যক্তি সালাতের হিফাজত করল, সে তার দীনের হিফাজত করল। আর যে সালাত নষ্ট
করল সে তো অন্যসব কিছু আরো অধিক পরিমাণে নষ্ট করবে।’‘যার কাছে সালাতের
গুরুত্ব যতটুকু ইসলামের গুরুত্বও তার কাছে ততটুকুই।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সর্বশেষ অসিয়ত ছিল সালাত। দুনিয়া থেকে বিদায়ের
প্রক্কালে তিনি নিজ উম্মতকে (আস-সালাত, আস-সালাত) সতর্ক করেছেন। ‘তোমরা সালাতের ব্যাপারে যত্নশীল থেকো’
এ পৃথিবী তাঁর সর্বশেষ হাসিও দেখেছিল এ সালাতকে উপলক্ষ্য করে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন হুজরা থেকে মসজিদের দিকে তাকিয়ে
দেখেন আবুবকর ইমামতি করছেন। সবাই তাঁর পেছনে একাত্ম হয়ে সালাতে নিমগ্ন।
নিজ হাতে রোপন করা দীনের এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে সফল মালীর মতো হেসেছিলেন
তিনি তৃপ্তির হাসি।ইসলামের যে অংশ সর্বশেষ বিদায় নেবে তা এই সালাত। সালাত
যখন বিদায় নেবে তখন ইসলামের আর কোনো অংশই অবশিষ্ট থাকবে না। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ইসলামের
বন্ধন সব এক এক করে ছিঁড়ে যাবে। যখন একটি বন্ধন ছিঁড়ে যাবে মানুষ তার
পরবর্তী বন্ধনটি আঁকড়ে ধরবে। সর্বপ্রথম ইসলামি শাসন বিলুপ্ত হবে আর
সর্বশেষ উঠে যাবে সালাত।’ (ইবনে হিব্বান)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সময় চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে; যেমন দেখতে পাচ্ছ এ চাঁদকে, তাঁকে দেখার জন্য তোমাদের হুড়োহুড়ি করতে হবে না।’ যদি তোমাদের সাধ্য থাকে তবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত ত্যাগ করবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
যারা সালাতের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করে তাদের নিন্দা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের
পর আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ
করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।’ (মারইয়াম : ৫৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যে আসরের সালাত ত্যাগ করল তার আমল বরবাদ হয়ে গেল।’ (বুখারি)
সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত- যার জন্য নবী-রাসূলগণ আপ্রাণ চেষ্টা
করেছেন এবং এ জন্য আল্লাহর বিশেষ হিদায়েত ও তাওফিক প্রার্থনা করেছেন। যেমন
ইবরাহিম আ. বলেন, ‘হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব, আর আমার দুআ কবুল করুন।’ (ইবরাহিম : ৪০) আল্লাহ
তাআলা ইসমাঈল আ. এর প্রশংসা করেছেন এ জন্য যে তিনি সালাত কায়েম করতেন এবং
অন্যদের সালাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। ইরশাদ হচ্ছে,‘সে তার পরিবারকে সালাত ও জাকাতের নির্দেশ দিত আর সে ছিল তার রবের সন্তোষপ্রাপ্ত।’ (মারইয়াম : ৫৫)
সালাতেরহুকুম:
সজ্ঞান সাবালক প্রত্যেক মুসলমানের ওপর সালাত ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর।’ (বাকারা : ১১০) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,‘অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ (নিসা : ১০৩) অন্যত্র বলেন, ‘আর
তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে ।
তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে; সালাত কায়েম করে এবং জাকাত দেয়; আর এটিই
হল সঠিক দীন।’ (বাইয়িনা : ০৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘তোমরা
নিজ সন্তানদের সালাতের নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছরে পর্দাপণ করে। আর
যখন তাদের বয়স দশে উপনীত হয় তখন সালাতের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা
আলাদা করে দাও।’ (সহিহ আল-জামে : ৫৮৬৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ
তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে অজু করবে,
অতঃপর সময় মত তা আদায় করবে এবং তার রুকু ও একাগ্রতা যথাযথ আদায় করবে,
আল্লাহর দায়িত্ব হচ্ছে তাকে ক্ষমা করে দেয়া। আর যে এমনটি করবে না, তার
ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা, হয় তাকে ক্ষমা করে দিবেন; নয় তাকে শাস্তি
দেবেন।’
সালাতেরমর্যাদা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, ‘সব কিছুর মূল হচ্ছে ইসলাম, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে সালাত আর তার শীর্ষ
পীঠ হল জিহাদ।’ (তিরমিজি : ৩৫৪১) সালাত আল−াহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও সর্বোত্তম আমল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা
অবিচল থাক, গণনা করো না। তোমরা কাজ করো। মনে রাখবে তোমাদের সর্বোত্তম আমল
হল সালাত, আর মুমিন ব্যতীত অন্য কেউ ওজুর যত্ন নেয় না।’ (ইবনে মাজাহ :
২৭৩)
কিয়ামতের দিন বান্দার সর্ব প্রথম সালাতের হিসাব নেয়া হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘কিয়ামতের
দিন সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি তার সালাত ঠিক হয় তবে তার
সব আমলই ঠিক হবে। আর তার সালাত বিনষ্ট হলে, সব আমলই বিনষ্ট হবে। (তিরমিজি :
২৭৮)
কুরআনে কারিমের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে
বিবিধ পদ্ধতিতে সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন। কখনো সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন
জাকাতের সঙ্গে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর।’ (বাকারা : ১১০) কখনো জিকিরের সঙ্গে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে যে আত্মশুদ্ধি করবে আর তার রবের নাম স্মরণ করবে অতঃপর সালাত আদায় করবে।’ (আলা : ১৪-১৫) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।’ (ত্বহা : ১৪)কখনো সবরের সঙ্গে। যেমন ইরশাদ হয়েছে ‘আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তা বিনয়ী ছাড়া অন্যদের ওপর কঠিন।’ (বাকারা : ৪৫)
কখনো কুরবানির সঙ্গে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত পড় ও কুরবানি কর।’ (কাওসার : ০২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘বল,
‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর
জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব। তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ
প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম।’ (আনআম : ১৬৪-১৬৫)
সালাতেরফজিলত:
সালাত নুর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘পবিত্রতা
ইমানের অর্ধেক আর আলহামদুলিল−াহ পাল−াকে সম্পূর্ণ করে, সুবহানাল−হ ও
আলহামদুলিল−াহ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে, সালাত নূর,
সদকা দলিল ও ধৈর্য হচ্ছে দীপ্তি এবং কুরআন তোমার পক্ষের অথবা বিপক্ষে
প্রমাণ ¯ (মুসলিম : ৩২৭) সালাত কবিরা গুনাহ ব্যতীত সকল পাপ মোচন করে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘পাঁচ
ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমা থেকে অপর জুমা মধ্যবর্তী সময়ে কৃত গুনাসমূহের
কাফ্ফারা। যাবৎ সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়।’ (মুসলিম : ৩৪৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন,
‘যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে আর সে দৈনিক পাঁচবার তাতে
গোসল করে, তবে কি তার শরীরে ময়লা থাকতে পারে? সাহাবিরা বললেন, না। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্তও তদ্রুপ। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা গুনাহ মোচন করে দেন।’ (মুসলিম : ৪৯৭) তিনি আরো একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, ‘মুসলিম
বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করে তখন তার
গুনাসমূহ এমনভাবে ঝরে পড়ে, যেমন পড়ে যাচ্ছে এ গাছের পাতাসমূহ।’ (আহমদ :
২০৫৭৬)
সালাতের গুণগত মানের ভিত্তিতেই পরকালের সফলতা ও জান্নাতের সম্মানিত স্থান নির্ধারিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত।’ (আল-মুমিন : ০১-০২) অতঃপর বলেন, ‘আর যারা নিজদের সালাত হিফাজত করে তারাই হবে ওয়ারিশ- যারা ফেরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (মুমিনুন: ০৯-১১)এ
সালাতের মাধ্যমেই জনৈক সাহাবি তার অপর শহিদ ভাইয়ের আগে জান্নাতে প্রবেশ
করার তাওফিক লাভ করেছেন। সালাতের মাধ্যমেই মুমিন ব্যক্তি কখনো কখনো সিদ্দিক
ও শহিদদের স্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়।
সালাত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম :
সালাত আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। ইসরা ও মেরাজের সফরে
তথা আসমানে সালাত ফরজ করা হয়েছে, যাতে কিয়ামত পর্যন্ত সালাত আসমান ও
জমিনের মাঝে সেতু বন্ধন হয়ে থাকে, দুনিয়ার পঙ্কিলতা ও পার্থিব নিচুতা
থেকে রূহানি উর্ধ্ব জগতে আরোহণের দরজা বান্দার জন্য সর্বদা উম্মুক্ত থাকে।
যদিও আসমান দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো জিনিস নয়। তবে অনেক দূরে। সালাত
এক মেরাজ, এতে রূহসমূহ বিনীত ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দরবারে ফিরে যায়।
সালাতের মাধ্যমে মুমিনগণ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। যেমন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নৈকট্য অর্জন করেছিলেন মেরাজের মাধ্যমে।
সালাত বোরাক ¯ এর মাধ্যমে বান্দা খুব দ্রুত তার ও আল্লাহর মাঝখানের
দূরত্ব অতিক্রম করে। সেজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্ব শেষ স্থান। আল্লাহ
তাআলা বলেন,‘ সেজদা কর এবং নিকটবর্তী হও।’ (আলাক : ১৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘সেজদা অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য অর্জন করে। সুতরাং সেজদায় তোমরা বেশি বেশি দুআ কর।’ (মুসলিম : ৭৪৪)
আনাস রা. বলেন,‘মেরাজের রাতে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা
হয়। অতঃপর তা কমিয়ে পাঁচ রাকাত করা হয়। পরে ডেকে বলা হয়, হে মুহাম্মদ,
আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় না। তুমি এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিনিময়ে
পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সওয়াব অর্জন করবে।’ (আহমদ, নাসায়ি ও তিরমিজি)
মুসলমানদেরজীবনেসালাতেরপ্রভাব:
সালাত ব্যক্তিকে গুনাহ থেকে হিফাজত করে, ববং গুনাহ এবং ব্যক্তির মাঝখানে
প্রতিবন্ধকের ন্যায় কাজ করে। কখনো গুনাহ বা অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে সঙ্গে
সঙ্গে তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের ভূমিকা ও তার প্রভাব প্রসঙ্গে বলেন,‘তোমাদের
কেউ ঘুমালে শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাতে তিনটি গিরা দিয়ে দেয়। প্রতিটি
গিরায় সে বলে, এখনও অনেক রাত বাকি, ঘুমাও। যদি সে জাগ্রত হয় ও আল্লাহর
নাম স্মরণ করে, একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে অজু করে দ্বিতীয় ঘিরাটি খুলে
যায়, যদি সে সালাত আদায় করে, তবে তৃতীয় ঘিরাটিও খুলে যায়। ফলে সে সকাল
করে কর্মোদ্যম ও প্রফুল্ল চিত্ত নিয়ে, অন্যথায় সে সকাল করে আলস্য, অকর্মা
ও অপবিত্র মন নিয়ে।’ (বুখারি : ১০৭৪ )
যেহেতু সালাত ইবাদতের প্রধান অংশ এবং মানুষের ¯ ওপর ব্যাপক প্রভাব
বিস্তার করে বলে প্রমাণিত, তাই কাফেররা শুআইব আ. এর দাওয়াতকে তার সালাতের
দিকে ইংগিত করে তার আহ্বানকে এ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে, ‘তারা বলল হে
শুআইব, তোমার সালাত কি তোমাকে এই নির্দেশ প্রদান করে যে, আমাদের
পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদত করত, আমরা তাদের ত্যাগ করি? অথবা আমাদের সম্পদে
আমরা ইচ্ছামত যা করি তাও ত্যাগ করি। তুমি বেশ সহনশীল সুবোধ।’
সালাত মুমিনের অন্তরে শক্তি সঞ্চার করে। কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
ফলে সে সক্ষম হয় প্রবৃত্তির চাহিদা ও আলস্যকে পরাজিত করতে। ,আল্লাহ বলেন‘
নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির করে। যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে
তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকণ্ঠিত। আর কল্যাণ যখন তাকে স্পর্শ করে তখন
সে হয়ে পড়ে অতিশয় কৃপণ, সালাত আদায়কারীগণ ছাড়া। যারা তাদের সালাতের
ক্ষেত্রে নিয়মিত।’ (মাআরেজ : ১৯-২৩)
তবে ব্যক্তির মাঝে সালাতের প্রভাব বিস্তার করার জন্য কতগুলো শর্ত রয়েছে। যেমন :
১. সময় মত সালাত আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময় ফরজ।’ (নিসা : ১০৩) রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,‘কোন আমল
আল−াহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বলেন, সময় মত সালাত আদায় করা।’ (বুখারি :
৪৯৬)
২. সালাত কায়েম করা। অর্থাৎ এর ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত ঠিক ঠিক আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত আদায় কর ও রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর।’ (বাকারা : ৪৩) অন্যত্র বলেন,‘সূর্য
হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের
কুরআন। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়।’ (ইসরা : ৭৮)
৩. নিয়মিত সালাত আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘যারা তাদের সালাতের ক্ষেত্রে নিয়মিত।’ (মাআরেজ : ২৩)
৪. সালাতের প্রতি যত্নশীল থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘আর যারা নিজদের সালাত হেফাজত করে। তারাই জান্নাতসমূহে সম্মানিত হবে।’ (মাআরেজ : ৩৪)
৫. খুশু তথা বিনয়ের সঙ্গে সালাত আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে। যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত।’ (মুমিনুন : ১-২)
অতএব প্রতিটি মুসলমানের কর্র্তব্য প্রত্যেক সালাত যথাসময়ে যথাযথ
গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা। তবেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করতে
পারব। বাঁচতে পারব উভয় জগতের অকল্যাণ থেকে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
No comments