প্রশ্নোত্তরে সালাতুদ- দুহার সংক্ষিপ্ত বিধান

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
 লেখক: আব্দুল্লাহ মুহসিন আস-সাহুদ | অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের



সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:

এটি সালাতুদ-দুহা বা চাশতের সালাতের বিধান সম্পর্কে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রদত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। এতে কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে সালাতুদ-দুহার বিবিধ বিধান আলোচনা করা হয়েছে। আর তাতে সালাতুল ইশরাক ও সালাতুল আওয়াবীন সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার বিধান কী?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সালাতুদ-দুহা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তা পালন করেছেন এবং সাহাবীগণকে তা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। (মাজমু‘উল ফাতওয়া: ৩৯৬/১১)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার ফযীলত কী?
উত্তর: রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের শরীরের প্রতিটি হাড় ও জোড়া সদকা করার দাবি নিয়ে সকালে উপনীত হয়। তোমাদের প্রতিটি তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সদকা, প্রতিটি তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ বলা) সদকা, প্রতি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা) সাদকা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকা। আর দুই রাকাত সালাতুত-দুহা আদায় করা উল্লিখিত সব কর্মের সমান হবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২০)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার সময় কোনটি?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উপরে উঠা থেকে নিয়ে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত। উত্তম হলো, এ সালাত পূর্ণ গরম হওয়ার পরপরই পড়ে নেওয়া। আর একেই বলে আউয়াবীনের সালাত। (মাজমু‘উল ফাতওয়া: ৩৯৬/১১)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার সময় কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়?
উত্তর: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ সূর্য উদয়ের পনের বা ত্রিশ মিনিট পর থেকে সূর্য ডলে পড়ার পাঁচ-দশ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত। (মাজমু‘উল ফাতওয়া: ৩০৬/১৪)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহা রাকাত সংখ্যা কত?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সর্বনিম্ন রাকাত সংখ্যা দুই রাকাত। আর যদি চার, ছয় বা আট রাকাত বা তার চেয়েও বেশিও কেউ স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। এ সালাতের রাকাত সংখ্যার সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নয়। (মাজমু‘উল ফাতওয়া: ৩৯৯/১১) শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সর্ব নিম্ন দুই রাকাত। আর বেশির কোনো সীমা নেই। মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করবে। (মাজমু‘উল ফাতাওয়া: ৩০৫/১৪)। সর্বনিম্ন দুই রাকাত। বেশির কোনো সীমা নেই। তবে উত্তম হলো, আট রাকাতের অধিক না হওয়া। উচিৎ হলো, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফিরানো। এক সালামের একসাথে পড়া উচিৎ নয়। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ:১৪৫/৬)
প্রশ্ন: প্রতিদিন সালাতুদ-দুহা সুন্নাত কিনা?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সালাতুদ-দুহা প্রতিদিনের সুন্নাত। (মাজমু‘উল ফাতাওয়া: ৩০-৫৯)। শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমী রহ. বলেন, সবচেয়ে স্পষ্ট কথা হলো, সালাতুদ-দুহা সবসময় সুন্নাত। (আশ-শরহুল মুমতি‘: ৪-৮৩)
প্রশ্ন: ইশরাক সালাত ও সালাতুদ-দুহার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, ইশরাকের সালাত ও সালাতুদ-দুহা একই সালাত। প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে সালাতুদ-দুহা আদায় করাকেই ইশরাক বলে। (মাজমু‘উল ফাতাওয়া: ৪০১/১১) শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, ইশরাকের সালাতই হলো সালাতুদ-দুহা, তবে যদি তুমি তা সূর্য উজ্জ্বল হওয়া ও এক ধনুক পরিমাণ উপরে উঠার পর সকাল সকাল আদায় কর, তবে তা হবে ইশরাকের সালাত। আর যদি তা শেষ ওয়াক্তে বা মাঝামাঝি সময়ে আদায় করা হয় তখন তা হবে সালাতুত দুহা। (লিকায়ুল বাব আল-মাফতুহ)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার উত্তম সময় কোনটি?
উত্তর: সালাতুদ-দুহার উত্তম সময়, উট (বা গো) বাছুরের গা যখন সূর্যের তাপে গরম হতে শুরু করে। আর তা হলো, সূর্যের আলো পরিপূর্ণ ছড়ানো ও উজ্জল হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্য মাথা বরাবর হওয়ার আগ পর্যন্ত। (ফাতওয়া বিষয়ক আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৪৮/৬)
প্রশ্ন: নফল সালাত যেমন সালাতুদ-দুহা জামা‘আতে পড়ার বিধান কী?
উত্তর: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, একাধিক ব্যক্তি একত্র হলে কোনো কোনো নফল সালাত জামা‘আতে পড়াতে কোনো অসুবিধা নেই, তবে এটি এমন সুন্নাতে রাতেবা নয় যে, যখনই সুন্নাত সালাত পড়বে তা জামা‘আতের সাথে পড়তে হবে। (মাজমু‘উল ফাতাওয়া: ৩৩৫/১৪)
প্রশ্ন: ঈদ অথবা বৃষ্টির সালাত সালাতুদ-দুহার স্থলাভিষিক্ত হবে কিনা?
উত্তর: ঈদ অথবা বৃষ্টির সালাত সালাতুদ-দুহার স্থলাভিষিক্ত হবে না, তা আলাদা সালাত। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ:  ২৫৬/৭)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহা পড়া সারা জীবনের জন্য সুন্নাতই থাকে নাকি একবার পড়া দ্বারা তা ফরয হয়ে যায়?
উত্তর: সালাতুদ দুহা একবার বা একাধিকবার পড়ার কারণে সে সুন্নতটির আদায় সব সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক বা ফরয হয়ে যায় না; বরং তা আগের মতোই সুন্নাত থাকে। (আল-লাজনাহ আদ- দায়িমাহ: ২৫৭/৭)
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ফযরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে, তারপর একই জায়গায় বসে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে অতঃপর দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে সে ব্যক্তি একটি হজ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব পাবে”। (তিরমিযী, হাদীস নং ৫৮৬) এ দুই রাকাত সালাতুদ দুহা কিনা?
উত্তর: হাদীসে উল্লিখিত দুই রাকাত সালাত সালাতুদ-দুহা, তবে এ দুই রাকাত সালাতের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এ দুই রাকাত সালাত ফজরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্য ওপরে উঠার আগ পর্যন্ত স্বীয় সালাত আদায় করার স্থানে বসে থাকার সাথে সম্পৃক্ত। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৪৮/৬)
প্রশ্ন: মুসাফিরের জন্য সালাতুদ দুহা আছে কিনা?
উত্তর: সালাতুদ-দুহা মুসাফির ও মুকীম সবার জন্য সুন্নাত। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৫১/৬)
প্রশ্ন: সালাতুল আউয়াবীন নামে কোনো সালাত আছে কিনা?
উত্তর: সালাতুল আউয়াবীন নামে আলাদা কোনো সালাত নেই, তবে সূর্যের রশ্মি প্রখর হওয়ার সময় থেকে নিয়ে সূর্য ডলার পূর্ব পর্যন্ত যে সালাতুদ-দুহা পড়া হয় তাকেই হাদীসে সালাতুল আউয়াবীন বলা হয়েছে। (আল-লাজনাহ আদ- দায়িমাহ: ১৫৪/৬)
প্রশ্ন: আইয়ামে বীযের সাওম সফরে না রাখলে তখন তার বিনিময়ে মাসের অন্য দিনগুলোতে রাখতে হবে কি না? অনুরূপ সালাতুদ-দুহা আদায় করতে না পারলে অন্য সময় আদায় করতে হবে কি না?
উত্তর: আইয়ামে বীযের সাওম এবং সালাতুদ-দুহা সবই নফল ‘ইবাদাত। সফরে থাকা বা বাড়িতে থাকা কোনো অবস্থায় এ ধরণের ইবাদাত বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং যে এ সব ইবাদতগুলো পালন করবে, তাকে সাওয়াব দেওয়া হবে। আর যে পালন করবে না মুকীম হোক বা মুসাফির হোক তার কোনো গুনাহ নেই। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৫৬/৬)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহায় কিরাত উচ্চস্বরে পড়বে নাকি নিম্নস্বরে পড়বে?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, দিনের সালাত যেমন সালাতুদ-দুহা ও অন্যান্য সালাতে কিরাত আস্তে পড়াই হলো সুন্নাত। (মাজমু‘উল ফাতাওয়া: ১২৭/১১)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহা যখন ছুটে যায় তখন তা কাযা করা হবে কিনা?
উত্তর: সালাতুদ-দুহা ছুটে গেলে তার কোনো কাযা নেই। কারণ, তা যে সময় পড়ার কথা সে সময়েই পড়তে হবে। পরে পড়ার কোনো বিধান নেই। (মাজমু‘উল ফাতাওয়া: ৩০৫/১৪) সমাপ্ত
তথ্য সুত্র:
১. মাজমু‘উল ফাতাওয়া লিল আল্লামা আব্দুল
২. আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ.
৩. মাজমু‘উল ফাতওয়া লিল আল্লামা শাইখ
৪. মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ.
৫. ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ দায়িমাহ (ফাতাওয়া বিষয়ক স্থায়ী উলামা পরিষদ)
৬. লিকায়ুল বাব আল-মাফতুহ লিল আল্লামা শাইখ
৭. মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ.
৮. আশ-শরহুল মুমাত্তে‘য় লিল আল্লামা শাইখ
৯. মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ.

No comments

Powered by Blogger.