মুমিনদের শাফা‘আত
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
লিখেছেনঃমুসাম্মাৎ শারমীন আখতার । ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
একদা কতিপয় লোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মেঘমুক্ত দ্বিপ্রহরের আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কষ্ট হয় এবং মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলল না, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ সময় চন্দ্র-সূর্য দেখতে তোমাদের যে অসুবিধা হয় ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখতে এর চেয়ে বেশী কোন অসুবিধা হবে না।
যখন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, তখন একজন ঘোষক ঘোষণা দিবেন, প্রত্যেক উম্মত যে যার ইবাদত করত সে যেন তার অনুসরণ করে। তখন যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করত, তাদের একজনও বাকী থাকবে না। সকলেই জাহান্নামের মধ্যে গিয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত এক আল্লাহর ইবাদতকারী নেককার ও গুনাহগার ছাড়া আর কেউ বাকী থাকবে না। তারপর আল্লাহ তাদের নিকট আসবেন এবং বলবেন,
তোমরা কার অপেক্ষায় আছ? প্রত্যেক উম্মত, যে যার ইবাদত করত, সে তার অনুসরণ কর। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো সে সব লোকদেরকে দুনিয়াতেই বর্জন করেছিলাম, যখন আজকের অপেক্ষায় তাদের কাছে আমাদের বেশী প্রয়োজন ছিল। আমরা কখনও তাদের সঙ্গে চলিনি।তারপর জাহান্নামের উপর দিয়ে পুলছিরাত পাতানো হবে এবং শাফা‘আতের অনুমতি দেওয়া হবে। তখন নবী রাসূলগণ স্ব স্ব উম্মতের জন্য এ প্রার্থনা করবেন, হে আল্লাহ! নিরাপদে রাখ, নিরাপদে রাখ। অনেক মুমিন এ পুলছিরাতের উপর দিয়ে চোখের পলকে পার হয়ে যাবে। অনেকেই বিদ্যুতের গতিতে পার হবে। অনেকেই বাতাসের গতিতে পার হবে। অনেকেই ঘোড়ার গতিতে পার হবে। আবার অনেকেই উটের গতিতে পার হবে। কেউ ছহীহ-সালামতে বেঁচে যাবে। আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাবে। আবার কেউ খন্ড-বিখন্ড হয়ে জাহান্নামে পড়বে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম হ’তে নিষ্কৃতি লাভ করবে। তারপর নবী করীম (ছাঃ) কসম করে বললেন,
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রব আমাদের নিকট না আসেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ স্থানে অপেক্ষা করব। যখন আমাদের প্রতিপালক আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব।
আর আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালকের মধ্যে এমন কোন চিহ্ন আছে কি যাতে তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে? তারা বলবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহর পায়ের নলা প্রকাশ করা হবে এবং বিশেষ আলো প্রকাশিত হবে। তখন যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহকে সিজদা করত, শুধু তাকেই আল্লাহ সিজদার অনুমতি দিবেন। আর যারা কারো ভয়ে কিংবা মানুষকে দেখানোর জন্য সিজদা করত, তারা থেকে যাবে। তারা পিঠের পিছনের দিকে চিৎ হয়ে উল্টে পড়ে যাবে।
- তোমাদের যে কেউ নিজের হক বা অধিকারের দাবীতে কত কঠোর তা তো তোমাদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু মুমিনগণ তাদের সে সমস্ত ভাইদের মুক্তির জন্য আল্লাহর সাথে আরও অধিক ঝগড়া করবে, যারা তখনও জাহান্নামে পড়ে রয়েছে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এ সমস্ত লোকেরা আমাদের সাথে ছিয়াম পালন করত, ছালাত আদায় করত এবং হজ্জ পালন করত। সুতরাং তুমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দাও।
তখন আল্লাহ বলবেন, যাও
তোমরা যাদেরকে চিন তাদেরকে জাহান্নাম হ’তে মুক্ত করে আন। তাদের মুখের
আকৃতি জাহান্নামের আগুনের প্রতি হারাম করা হয়েছে। এজন্য তারা মুখ দেখে
চিনতে পারবে। তখন তারা জাহান্নাম হ’তে অনেক লোক বের করে আনবে।
- তারপর বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! এখন সেখানে আর এমন একজন লোকও নেই যাকে বের করার জন্য আপনি আদেশ করেছেন।
- তারপর আল্লাহ বলবেন, আবার যাও যাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে বের করে আন। এবারও তারা বহুসংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে এবং বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! ঈমানদার কোন ব্যক্তিকে আমরা জাহান্নামে রেখে আসিনি।
এতে তারা স্রোতের ধারে যেমনভাবে গাছের বীজ গজায়, তেমনিভাবে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সজীব হয়ে উঠবে। তখন তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসবে মুক্তার মত চকচকে হয়ে। তাদের কাঁধে সীল মোহর থাকবে। জান্নাতীরা তাদের দেখে বলবে এরা পরম দয়ালু আল্লাহর মুক্তকৃত দাস। আল্লাহ্ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন, অথচ তারা পূর্বে কোন আমল বা কোন কল্যাণের কাজ করেনি। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, এ জান্নাতে তোমরা যা দেখছ, তা তোমাদেরকে দেওয়া হ’ল এর সঙ্গে অনুরূপ পরিমাণ আরও দেওয়া হ’ল’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৪১)।
দুনিয়াতে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করলে কিংবা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলে পরকালে ঐ উপাস্য-মা‘বূদ ও শরীকদের সাথেই জাহান্নামে যেতে হবে। পক্ষান্তরে যারা কেবল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখত, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করতো না; তারা কোন নেকীর কাজ না করলেও এক সময় জান্নাতে যাবে তাদের ঈমানের কারণে। তাই আল্লাহর প্রতি খালেছ অন্তরে ঈমান আনতে হবে। তাহ’লে জান্নাত লাভ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রতি একনিষ্ঠভাবে ঈমান আনার তাওফীক্ব দিন- আমীন!
পিঞ্জুরী, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
No comments