ঝাড়-ফুঁকের বিধান || শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির
ঝাড়-ফুঁকের বিধান
এ বিষয়টিও তাবাররুক ও তাওয়াস্সুলের বিধানের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু এখানে কুরআনের আয়াত বা অন্য কোনো উত্তম যিকিরের ওসীলায় রোগ হতে মুক্তি লাভের চেষ্টা করা হয়। এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
১। দোয়া-কালাম পাঠ করে রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করা।
২। দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দেওয়া এবং সেই পানি রোগীকে পান করানো বা রোগীর শরীরে মাখিয়ে দেওয়া।
৩। দোয়া-কালাম লেখা কাগজ তাবীকে ভরে রোগীর শরীরে লটকিয়ে দেওয়া।
নি¤েœ এই সকল বিষয় সম্পর্কে পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো।
দোয়া-কালাম পাঠ করে রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করা।
রসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
ঝাড়-ফুঁক, জাদু-টোনা ও তাবীজ-তুমার শিরক। (আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। শায়েখ আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহা/২৯৭২)
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
তোমরা ঝাড়-ফুঁকের সময় যেসব মন্ত্র পাঠ করো তা আমাকে পড়ে শোনাও যদি তার মধ্যে কোনো শিরক না থাকে তবে সমস্যা নেই। (সহীহ্ মুসলিম)
এছাড়া রসূলুল্লা সাঃ এর উপর এক ইয়াহুদী জাদু করলে জিব্রাইল আঃ নিজে তাকে ঝাড়-ফুঁক করেন।
আমি তার জন্য আপনাকে আল্লাহর নামে ঝাড়-ফুঁক করছি। আপনার মধ্যে যা কিছু রোগ আছে আল্লাহ তা থেকে মুক্ত করবেন। (সহীহ মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর একজন সাহাবী একবার কোনো একজন ব্যক্তিকে সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিলে তার রোগ সেরে যায়। এবং এর বিনিময়ে তাকে ১০০ ছাগল উপহার দেয়। রসূলুল্লাহ সাঃ এটা শুনে খুশি হয়ে বলেন,
সে কিভাবে জানলো যে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা যায়! তোমরা ছাগলগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও আমার জন্যে একটি অংশ রেখো। (মুসলিম)
এই সকল হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ওলামায়ে কিরাম বলেছেন, যে হাদীসে ঝাড়-ফুঁককে শিরক বলা হয়েছে সেখানে সকল প্রকার ঝাড়-ফুঁক উদ্দেশ্য নয় বরং যেসব ঝাড়-ফুঁকের মধ্যে শিরক কুফর রয়েছে কেবল সেগুলো উদ্দেশ্য। যেহেতু অন্য হাদীসে বলা হয়েছে। “ ঝাড়-ফুঁকে কোনো সমস্যা নেই যদি তাতে শিরক না থাকে”। একরণে ওলামায়ে কিরাম শর্ত স্বাপেক্ষ ঝাড়-ফুঁককে বৈধ বলেছেন।
ইবনে হাযার আসক্বালানী রঃ বলেন, উলামায়ে কিরাম ইজমা করেছেন যে, তিনটি শর্তের উপর ভিত্তি করে ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ।
১। সেটা আল্লাহর কালাম, তার নাম ও গুনাবলীর মাধ্যমে হতে হবে।
২। আরবী ভাষায় হতে হবে বা এমন ভাষায় হতে হবে যার অর্ধ বোধগম্য।
৩। এমন বিশ্বাস বিদ্যামান থাকতে হবে যে, ঝাড়-ফুঁক স্বয়ংক্রীয়ভাবে কোনো কিচু করার ক্ষমতা রাখে না বরং আল্লাহর ইচ্ছায় তা কাজ করে । (ফাতহুল বারী)
উপরে বর্ণিত হাদীস সমূহের মূলভাব এবং ওলামায়ে কিরামের বক্তব্যের বিষয়বস্তু থেকে এটা অনুধাবন করা যায় যে, কেবল মাত্র কুরআনের আয়াত বা হাদীসে প্রমাণিত দোয়াই নয় বরং যে কোন ভাষায় আল্লাহর নাম গুনাবলী বা প্রসংশা সম্বলিত দোয়ার মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা যেতে পারে। যেহেতু রসূলুল্লাহ সাঃ স্পষ্ট বলেন, শিরক নয় এমন যে কোন কিছুর মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করে দোষ নেই। (মাসলিম) এছাড়া ওলামায়ে কিরামে বোধগম্য যে কোনো উত্তম কথা দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ মনে করেছেন।
ঐ হাদীসের মধ্যেও এ বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে যেখানে একজন সাহাবী নিজে থেকেই সূরা ফাতিহা পাঠ করে ঝাড়-ফুঁক করেন এবং তার ঝাড়-ফুঁকে রোগী সুস্থ হয়। পরে রসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, সে কিভাবে জানলো যে সূরা ফাতিহার মাধমে ঝাড়-ফুঁক করা যায়! তোমরা ছাগলগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও আমার জন্য একটি অংশ রেখো। (মুসলিম)
এটা প্রমাণ করে যে, রসূলুল্লাহ সাঃ উক্ত ব্যক্তিকে এটা শিক্ষা দেন নি। অন্য বর্ণনাতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে । রসূলুল্লাহ সাঃ এর এই প্রশ্নে উক্ত ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রসুল এটা আমার অন্তরে জাগ্রত হয়েছিল । ( দারে কুতনী)
এটা প্রমাণ করে যে, নিজের চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে যে কোনো আয়াত বা দোয়াকে ঝাড়-ফুঁকের জন্য বাছায় করা যায়। আমরা এ বিষয়টি উল্লেখ করলাম কারণ কেউ কেউ এ বিষয়ে কড়াকড়ি করে বলে থাকে কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত নেই এমন কিছুর মাধমে ঝাড়-ফুঁক করা যাবে না।
দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে বা কুরআনের আয়াত লিখে পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি রোগীকে পান করানো বা রোগীর শরীরে মাখিয়ে দেওয়া।
আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীসে এমন বর্ণিত আছে যে রসূলুল্লাহ সাঃ দোয়া পাঠ করে মাটি ও পানিতে ফুঁ দিয়ে তা ছাবিত ইবনে কায়েসের শরীরে ঢেলেদেন। শায়েখ আলবানী বলেছেন হাদীসটি দুর্বল।
জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ বর্ণনা করেন রসূল্লাহ সাঃ কে নাশরা (জ্বিনের আছর থেকে বা অন্য কোনো রোগ থেকে মুক্ত করার জন্য মন্ত্র পাঠ করা পানি দ্বারা রোগীর শরীর ধৌত করা) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা তো শয়তানী কর্মকান্ড” (আবু দাউদ, শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহা/২৭৬০)
ইমাম কুরতুবী রঃ বলেন,
“নূশরা” বৈধ কিনা সে বিষয়ে আলেমরা মতপার্থক্য করেছেন। আর তা হলো আল্লাহর নাম বা কুরআন পাঠ করে সেটা পানি দ্বারা ধৌত করে উক্ত পানি রোগীকে পান করানো বা রোগীর শরীরে মাখানো। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব এটাকে বৈধ বলেছেন। তাকে বলা হলো একজন ব্যক্তির উপর জাদু করার ফলে সে স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে পারে না তার জন্য কি “নুশরা” করা বৈধ হবে? তিনি বললেন এতে কোন সমস্যা নেই। উপকারী কোনো বিষয় হতে নিষেধ করা হবে না। তবে মুজাহিদ কুরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করে সেটা ধৌত করা পানি রোগীকে পান করানো পছন্দ করেননি । আয়েশা রাঃ সূরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে পানি ভর্তি পাত্রে ফুঁ দিয়ে তা রোগাগ্রস্থের উপর ঢেলে দিতেন।
তিনি আরো বলেন, হাসান ও ইব্রাহীম আন-নাখঈ রঃ এটাকে নিষেধ বলেছেন। তিনি বলেছেন আমার তো মনে হয় এমন করলে রোগ আরো বেশি হবে। সম্ভবত তিনি মনে করেছেন যেহেতু এখানে কুরআন (পানি দ্বারা) মুছে ফেলা হচ্ছে তাই (এই অপরাধের শাস্তি হিসাবে) রোগ মুক্তি হওয়ার পরিবর্তে রোগ হওয়ার সম্ভবনায় বেশি। (তাফসীরে কুরতুবী)
ইবনে মুফলিহ্ রঃ বর্ণনা করেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বালকে প্রশ্ন করা হলো, কোনো ব্যক্তি যদি একটি পাতে কুরআনের আয়াত লিখে পরে তাকে পানি ঢেলে রোগীকে পান করায় তবে এটা কেমন হবে? তিনি বললেন কোনো সমস্যা নেই। তাকে আবার প্রশ্ন করা হলো, যদি ঐ পানি দিয়ে গোসল করে তবে কেমন হবে। তিনি বললেন এ বিষয়ে আমি কিছু শুনিনি।
আল-খাল্লাল বলেন, উক্ত পানি দ্বারা গোসল করা অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলো গোসলের সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবেশ করে যেখানে কুরআন পাঠ করা পানি পৌছানো উচিৎ নয়।
তবে উক্ত পানি দ্বারা হাত মুখ ধৌত করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আহমদ ইবনে হাম্বল রাঃ থেকে বর্ণনা রয়েছে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের ছেলে সালিহ্ বলেন,
কখনও কখনও আমি অসুস্থ হলে আমার পিতা একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে কিছু পাঠ করতেন। তারপর আমাকে বলতেন এটা পান করো এবং এটা দ্বারা হাত মুখ ধৌত কর। (আল-আদাব আশ-শারইয়্যাহ্, ইবনে মুফলিহ)
ইউসুফ ইবনে মুসা রঃ বর্ণনা করেছেন,
মসজিদে আবু আব্দিল্লাহ্ (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল) এর নিকট পানির পাত্র আনা হতো আর তিনি তাতে দোয়া পড়ে দিতেন।
এসব ঘটনা ইবনে মুফলিহ রঃ তার গ্রন্থ আল-আদাব আশ-শারইয়্যাতে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ বলেন,
রোগাগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য কুরআনের কিছু অংশ পবিত্র কালি দ্বারা লিখে তা ধৌত করে তাকে খাওয়ানো বৈধ। ইমাম আহমদ ও অন্যান্য ওলামায়ে কিরাম এ বিষয়ে স্পষ্ট অভিমত দিয়েছে। (মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া)
ইবনে কায়্যিম রঃ নিজে শারীরিক সমস্যার কারণে সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফু দিয়ে তা পান করতেন। তিনি বলেন,
আমি এক বাটি জমজম কুপের পানি নিয়ে তাকে কয়েকবার সূরা ফাতিহা পাঠ করে তা পান করতাম এতে আমি এত উপকার পেয়েছি যে অন্য কোন ঔষধে তা পায় নি। (মাদারিজুস সালিকীন)
মোট কথা দোয়া-কালাম পাঠ করা পানি গায়ে মাখা বা পান করাতে কোনো দোষ নেই। যদি সেটা আল্লাহর কিতাব বা তার গুনাবলী সম্বলিত দোয়া-কালামের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ওলামায়ে কিরামের এটাই মত। তবে লক্ষ্য রাখা উচিৎ যাতে শরীরের আপত্তিকর স্থানে এ পানি না পৌছায়।
এ বিষয়টিও তাবাররুক ও তাওয়াস্সুলের বিধানের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু এখানে কুরআনের আয়াত বা অন্য কোনো উত্তম যিকিরের ওসীলায় রোগ হতে মুক্তি লাভের চেষ্টা করা হয়। এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
১। দোয়া-কালাম পাঠ করে রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করা।
২। দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দেওয়া এবং সেই পানি রোগীকে পান করানো বা রোগীর শরীরে মাখিয়ে দেওয়া।
৩। দোয়া-কালাম লেখা কাগজ তাবীকে ভরে রোগীর শরীরে লটকিয়ে দেওয়া।
নি¤েœ এই সকল বিষয় সম্পর্কে পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো।
দোয়া-কালাম পাঠ করে রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করা।
রসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
ঝাড়-ফুঁক, জাদু-টোনা ও তাবীজ-তুমার শিরক। (আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। শায়েখ আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহা/২৯৭২)
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
তোমরা ঝাড়-ফুঁকের সময় যেসব মন্ত্র পাঠ করো তা আমাকে পড়ে শোনাও যদি তার মধ্যে কোনো শিরক না থাকে তবে সমস্যা নেই। (সহীহ্ মুসলিম)
এছাড়া রসূলুল্লা সাঃ এর উপর এক ইয়াহুদী জাদু করলে জিব্রাইল আঃ নিজে তাকে ঝাড়-ফুঁক করেন।
আমি তার জন্য আপনাকে আল্লাহর নামে ঝাড়-ফুঁক করছি। আপনার মধ্যে যা কিছু রোগ আছে আল্লাহ তা থেকে মুক্ত করবেন। (সহীহ মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর একজন সাহাবী একবার কোনো একজন ব্যক্তিকে সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিলে তার রোগ সেরে যায়। এবং এর বিনিময়ে তাকে ১০০ ছাগল উপহার দেয়। রসূলুল্লাহ সাঃ এটা শুনে খুশি হয়ে বলেন,
সে কিভাবে জানলো যে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা যায়! তোমরা ছাগলগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও আমার জন্যে একটি অংশ রেখো। (মুসলিম)
এই সকল হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ওলামায়ে কিরাম বলেছেন, যে হাদীসে ঝাড়-ফুঁককে শিরক বলা হয়েছে সেখানে সকল প্রকার ঝাড়-ফুঁক উদ্দেশ্য নয় বরং যেসব ঝাড়-ফুঁকের মধ্যে শিরক কুফর রয়েছে কেবল সেগুলো উদ্দেশ্য। যেহেতু অন্য হাদীসে বলা হয়েছে। “ ঝাড়-ফুঁকে কোনো সমস্যা নেই যদি তাতে শিরক না থাকে”। একরণে ওলামায়ে কিরাম শর্ত স্বাপেক্ষ ঝাড়-ফুঁককে বৈধ বলেছেন।
ইবনে হাযার আসক্বালানী রঃ বলেন, উলামায়ে কিরাম ইজমা করেছেন যে, তিনটি শর্তের উপর ভিত্তি করে ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ।
১। সেটা আল্লাহর কালাম, তার নাম ও গুনাবলীর মাধ্যমে হতে হবে।
২। আরবী ভাষায় হতে হবে বা এমন ভাষায় হতে হবে যার অর্ধ বোধগম্য।
৩। এমন বিশ্বাস বিদ্যামান থাকতে হবে যে, ঝাড়-ফুঁক স্বয়ংক্রীয়ভাবে কোনো কিচু করার ক্ষমতা রাখে না বরং আল্লাহর ইচ্ছায় তা কাজ করে । (ফাতহুল বারী)
উপরে বর্ণিত হাদীস সমূহের মূলভাব এবং ওলামায়ে কিরামের বক্তব্যের বিষয়বস্তু থেকে এটা অনুধাবন করা যায় যে, কেবল মাত্র কুরআনের আয়াত বা হাদীসে প্রমাণিত দোয়াই নয় বরং যে কোন ভাষায় আল্লাহর নাম গুনাবলী বা প্রসংশা সম্বলিত দোয়ার মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা যেতে পারে। যেহেতু রসূলুল্লাহ সাঃ স্পষ্ট বলেন, শিরক নয় এমন যে কোন কিছুর মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করে দোষ নেই। (মাসলিম) এছাড়া ওলামায়ে কিরামে বোধগম্য যে কোনো উত্তম কথা দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ মনে করেছেন।
ঐ হাদীসের মধ্যেও এ বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে যেখানে একজন সাহাবী নিজে থেকেই সূরা ফাতিহা পাঠ করে ঝাড়-ফুঁক করেন এবং তার ঝাড়-ফুঁকে রোগী সুস্থ হয়। পরে রসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, সে কিভাবে জানলো যে সূরা ফাতিহার মাধমে ঝাড়-ফুঁক করা যায়! তোমরা ছাগলগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও আমার জন্য একটি অংশ রেখো। (মুসলিম)
এটা প্রমাণ করে যে, রসূলুল্লাহ সাঃ উক্ত ব্যক্তিকে এটা শিক্ষা দেন নি। অন্য বর্ণনাতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে । রসূলুল্লাহ সাঃ এর এই প্রশ্নে উক্ত ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রসুল এটা আমার অন্তরে জাগ্রত হয়েছিল । ( দারে কুতনী)
এটা প্রমাণ করে যে, নিজের চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে যে কোনো আয়াত বা দোয়াকে ঝাড়-ফুঁকের জন্য বাছায় করা যায়। আমরা এ বিষয়টি উল্লেখ করলাম কারণ কেউ কেউ এ বিষয়ে কড়াকড়ি করে বলে থাকে কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত নেই এমন কিছুর মাধমে ঝাড়-ফুঁক করা যাবে না।
দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে বা কুরআনের আয়াত লিখে পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি রোগীকে পান করানো বা রোগীর শরীরে মাখিয়ে দেওয়া।
আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীসে এমন বর্ণিত আছে যে রসূলুল্লাহ সাঃ দোয়া পাঠ করে মাটি ও পানিতে ফুঁ দিয়ে তা ছাবিত ইবনে কায়েসের শরীরে ঢেলেদেন। শায়েখ আলবানী বলেছেন হাদীসটি দুর্বল।
জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ বর্ণনা করেন রসূল্লাহ সাঃ কে নাশরা (জ্বিনের আছর থেকে বা অন্য কোনো রোগ থেকে মুক্ত করার জন্য মন্ত্র পাঠ করা পানি দ্বারা রোগীর শরীর ধৌত করা) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা তো শয়তানী কর্মকান্ড” (আবু দাউদ, শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহা/২৭৬০)
ইমাম কুরতুবী রঃ বলেন,
“নূশরা” বৈধ কিনা সে বিষয়ে আলেমরা মতপার্থক্য করেছেন। আর তা হলো আল্লাহর নাম বা কুরআন পাঠ করে সেটা পানি দ্বারা ধৌত করে উক্ত পানি রোগীকে পান করানো বা রোগীর শরীরে মাখানো। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব এটাকে বৈধ বলেছেন। তাকে বলা হলো একজন ব্যক্তির উপর জাদু করার ফলে সে স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে পারে না তার জন্য কি “নুশরা” করা বৈধ হবে? তিনি বললেন এতে কোন সমস্যা নেই। উপকারী কোনো বিষয় হতে নিষেধ করা হবে না। তবে মুজাহিদ কুরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করে সেটা ধৌত করা পানি রোগীকে পান করানো পছন্দ করেননি । আয়েশা রাঃ সূরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে পানি ভর্তি পাত্রে ফুঁ দিয়ে তা রোগাগ্রস্থের উপর ঢেলে দিতেন।
তিনি আরো বলেন, হাসান ও ইব্রাহীম আন-নাখঈ রঃ এটাকে নিষেধ বলেছেন। তিনি বলেছেন আমার তো মনে হয় এমন করলে রোগ আরো বেশি হবে। সম্ভবত তিনি মনে করেছেন যেহেতু এখানে কুরআন (পানি দ্বারা) মুছে ফেলা হচ্ছে তাই (এই অপরাধের শাস্তি হিসাবে) রোগ মুক্তি হওয়ার পরিবর্তে রোগ হওয়ার সম্ভবনায় বেশি। (তাফসীরে কুরতুবী)
ইবনে মুফলিহ্ রঃ বর্ণনা করেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বালকে প্রশ্ন করা হলো, কোনো ব্যক্তি যদি একটি পাতে কুরআনের আয়াত লিখে পরে তাকে পানি ঢেলে রোগীকে পান করায় তবে এটা কেমন হবে? তিনি বললেন কোনো সমস্যা নেই। তাকে আবার প্রশ্ন করা হলো, যদি ঐ পানি দিয়ে গোসল করে তবে কেমন হবে। তিনি বললেন এ বিষয়ে আমি কিছু শুনিনি।
আল-খাল্লাল বলেন, উক্ত পানি দ্বারা গোসল করা অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলো গোসলের সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবেশ করে যেখানে কুরআন পাঠ করা পানি পৌছানো উচিৎ নয়।
তবে উক্ত পানি দ্বারা হাত মুখ ধৌত করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আহমদ ইবনে হাম্বল রাঃ থেকে বর্ণনা রয়েছে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের ছেলে সালিহ্ বলেন,
কখনও কখনও আমি অসুস্থ হলে আমার পিতা একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে কিছু পাঠ করতেন। তারপর আমাকে বলতেন এটা পান করো এবং এটা দ্বারা হাত মুখ ধৌত কর। (আল-আদাব আশ-শারইয়্যাহ্, ইবনে মুফলিহ)
ইউসুফ ইবনে মুসা রঃ বর্ণনা করেছেন,
মসজিদে আবু আব্দিল্লাহ্ (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল) এর নিকট পানির পাত্র আনা হতো আর তিনি তাতে দোয়া পড়ে দিতেন।
এসব ঘটনা ইবনে মুফলিহ রঃ তার গ্রন্থ আল-আদাব আশ-শারইয়্যাতে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ বলেন,
রোগাগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য কুরআনের কিছু অংশ পবিত্র কালি দ্বারা লিখে তা ধৌত করে তাকে খাওয়ানো বৈধ। ইমাম আহমদ ও অন্যান্য ওলামায়ে কিরাম এ বিষয়ে স্পষ্ট অভিমত দিয়েছে। (মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া)
ইবনে কায়্যিম রঃ নিজে শারীরিক সমস্যার কারণে সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফু দিয়ে তা পান করতেন। তিনি বলেন,
আমি এক বাটি জমজম কুপের পানি নিয়ে তাকে কয়েকবার সূরা ফাতিহা পাঠ করে তা পান করতাম এতে আমি এত উপকার পেয়েছি যে অন্য কোন ঔষধে তা পায় নি। (মাদারিজুস সালিকীন)
মোট কথা দোয়া-কালাম পাঠ করা পানি গায়ে মাখা বা পান করাতে কোনো দোষ নেই। যদি সেটা আল্লাহর কিতাব বা তার গুনাবলী সম্বলিত দোয়া-কালামের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ওলামায়ে কিরামের এটাই মত। তবে লক্ষ্য রাখা উচিৎ যাতে শরীরের আপত্তিকর স্থানে এ পানি না পৌছায়।
No comments