জামাত শুরু হয়ে গেলে ফজরের নামাজে আগে সুন্নত না ফরজ ?? প্রায় সময় আমরা যে ভূলটি করে থাকি তার সমাধান

আমাদের সমাজে ধর্মীয় কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়ে থাকে। আসলে যার কোনো ভিত্তি নেই অথবা ইসলাম ওই বিষয়গুলো সমর্থনও করে না। কিন্তু না জানা থাকার কারণে সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো নিয়ে ভুল করে থাকে। এরকমই আজকের বিষয়টি।


প্রশ্ন: ফজরের নামাজে মসজিদে গিয়ে যদি দেখা যায় যে, জামাত শুরু হয়ে গেছে। তখন ফজরের সুন্নত না ফরজ কোনটি আগে পড়তে হবে?
উত্তর: ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে যেয়ে যদি দেখা যায়, ফরজ নামাজের ইকামত হচ্ছে কিংবা জামাত শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় সুন্নত নামাজ আদায় শেষ করে জামাতে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সুন্নত আদায় করতে হবে।
কারণ, ফজরের নামাজের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিয়ো না। যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়।’ -মুসনাদে আহমদ

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হজরত আবু দারদা (রা.)-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবিদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন।
যেমন হজরত আবু দারদা (রা.) ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সঙ্গে জামাতে শরিক হতেন। -শরহু মায়ানিল আসার

সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সঙ্গে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত নামাজ পড়ে নিতে হবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর সুন্নত পড়ে নেবে।
উল্লেখ্য, যে কোনো কোনো ইসলামি স্কলার সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ইসলামি স্কলারের অভিমত তা-ই, যা ওপরে বলা হয়েছে।

তবে জামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলো-
কাতারের সঙ্গে মিলিত হয়ে সুন্নত নামাজ পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো খুঁটির আড়ালে সুন্নত পড়বে।জামাত থেকে পেছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে এবং পরে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াক্তভেদে ২ বা ৪ রাকাআত করে নামাজ আদায় করেছেন। যার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের ২ রাকাআত ফরজ নামাজের আগে ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজের অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। এ নামাজের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। ফজরের ২ রাকআত সুন্নাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো-
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহরের আগে ৪ রাকাআত এবং ফজরের আগে ২ রাকাআত (সুন্নাত) নামাজ কখনো ছেড়ে দিতেন না। (বুখারি)

এ সুন্নাত নামাজ আদায়ের ফজিলত হলো নামাজ আদায়কারীর জন্য জান্নাতে ঘর বানানো হয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত উম্মে হাবিবাহ বিনতে আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে মুসলমানই প্রতিদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বার রাকাআত (নফল) নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর বানাবেন অথবা তার জন্য জান্নাতে ঘর বানানো হয়। (মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিসে ১২ রাকাআত (নফল) নামাজের মধ্যে ফজরের ফরজ আগের ২ রাকাআতও অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, ‘রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের ২ (রাকাআত) সুন্নাতের মোকাবেলায় অন্য কোনো নফলের উদ্যোগ গ্রহণ করতেন না। (বুখারি ও মুসলিম)

আল্লাহর বিধান পালনে ফরজ নামাজ আদায়ের পর ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব অত্যাধিক হওয়ায় প্রিয়নবি ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজের গুরুত্বের পাশাপাশি অসামান্য ফজিলতও তুলে ধরেছেন। যা উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত আয়িশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হাদিসে বর্ণনা করেছেন।
রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজ দুনিয়া এবং এর মধ্যকার সব কিছুর চেয়েও উত্তম। (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের ফরজ নামাজের আগে ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। ২ রাকাআত সুন্নাত আদায়ের মাধ্যমে হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments

Powered by Blogger.